সমস্থিতি (ISOSTASY) সমস্থিতি সম্পর্কে এরি এবং প্রাট এর মতবাদ (Isostasy Theories of AIRY And PRATT)
আজকের আলোচনার বিষয় হল
সমস্থিতি (ISOSTASY)
সংজ্ঞা (Defination)
বৈশিষ্ট্য(Characteristics Of Isostasy)
সমস্থিতিজনিত ভারসাম্যের উপর ভূপৃষ্ঠে ক্ষয় ও সঞ্চয়ের প্রভাব
LEVEL OF COMPENSATION
অভিকর্ষ বিচ্যুতি বা Gravity anomaly
এইরির তত্ত্ব(theory of Airy)
প্রাটের তত্ত্ব (Theory of Pratt)
সমস্থিতি (ISOSTASY):-
জার্মান শব্দ 'isotasios' থেকে isostasy শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ Equipose বা ভারসাম্য।1859 খ্রিস্টাব্দে ভূতত্ত্ববিদ c.e Dutton প্রথম isostasy শব্দটি ব্যবহার করেন।
সংজ্ঞা(Defination):-
শিলার ঘনত্ব বা প্লবতার তারতম্যের জন্য ভূত্বকীয় অংশগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থান করে।
অভিকর্ষজনিত ভারসাম্যের অবস্থা শিলামন্ডলের বিভিন্ন অংশের সাথে পরস্পরের মধ্যে এক ধরনের সামঞ্জস্য রক্ষা করে।
ও অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।ভূত্বকের এইরূপ ভারসাম্যলাভের ফলে উচ্চতার বৈচিত্র্য বজায় রাখা সম্ভব হয়।এরূপ ভারসাম্য লাভের অবস্থাকে সমস্থিতি বা isostasy বলে।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics Of Isostasy) :-
১.লঘু ঘনত্বের মহাদেশীয় ভূত্বক(2.65-2.85 gram/ঘন সেমি)
গুরু ঘনত্বের মহাসাগরীয় ভূত্বকের(2.87-3.0 গ্রাম/ঘন সেমি)ওপর ভেসে থাকে।
২.পুনরায়,
আরও বেশি ঘনত্বের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের ওপর কম ঘনত্বের মহাসাগরীয় ভূত্বক ও মহাদেশীয় ভূত্বক ভাসমান অবস্থায় থাকে।
৩.এইরির মত অনুসারে বিভিন্ন ভরের ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলগুলি (যেমন~পর্বত,মালভূমি,সমভূমি)
তাদের নিজ নিজ বেধ ও ঘনত্ব অনুযায়ী ভূগর্ভের বিভিন্ন গভীরতায় প্রোথিত অবস্থায় থাকে।
৪.ভূপৃষ্টের ওপর ক্ষয় ও সঞ্চয় প্রক্রিয়া সমস্থিতিজনিত ভারসাম্যের অবস্থাকে প্রভাবিত করে।ভূবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে প্লিষ্টসিন হিমযুগে ঘন বরফের আস্তরণ ভূপৃষ্ঠকে ঢেকে দিয়েছিল।ফলে সঞ্চিত বরফের স্তর ভূপৃষ্টের ওই অঞ্চলের ওপর ভর বৃদ্ধি করে।
হিমযুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে উষ্ণযুগ শুরু হলে বরফের আস্তরণ ধীরে ধীরে গলে যেতে থাকে।
ফলে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত বরফের ভর কমে যায় এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকে।এই ঘটনা প্রমাণ করে যে মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় ভূত্বক অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর উপরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।
সমস্থিতিজনিত ভারসাম্যের উপর ভূপৃষ্ঠে ক্ষয় ও সঞ্চয়ের প্রভাব
ক্ষয় ও সঞ্চয়(Erosion and Deposition):-
এই দুটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া গুলির মতো ভূমিরূপ গঠন ও প্রকৃতির পরিবর্তনের সাহায্য করে।নদী,হিমবাহ,বায়ু,সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি ক্ষয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে প্রকৃতির নিরন্তর পরিবর্তন ঘটায়।
সমস্থিতির প্রমাণ(proof of isostasy):
ভূপৃষ্টের ওপর ক্ষয় ও সঞ্চয় প্রক্রিয়া সমস্থিতিজনিত ভারসাম্যের অবস্থাকে প্রভাবিত করে।ভূবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে প্লিষ্টসিন হিমযুগে ঘন বরফের আস্তরণ ভূপৃষ্ঠকে ঢেকে দিয়েছিল।ফলে সঞ্চিত বরফের স্তর ভূপৃষ্টের ওই অঞ্চলের ওপর ভর বৃদ্ধি করে।
হিমযুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে উষ্ণযুগ শুরু হলে বরফের আস্তরণ ধীরে ধীরে গলে যেতে থাকে।
ফলে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত বরফের ভর কমে যায় এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকে।এই ঘটনা প্রমাণ করে যে মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় ভূত্বক অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর উপরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে(প্রতি ১০০ বছরে ১.০৭ মিটার হারে ১৪,২৮৬ বছরে সর্বাধিক ২৫০ মিটার উত্থান ঘটেছে)।
LEVEL OF COMPENSATION:-
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় মহাদেশ ও মহাসাগরের ভূত্বক গঠনকারী পদার্থসমূহের চাপ বা পীড়ন সর্বত্র সমান থাকে।
প্রাট,বোওয়ী,হেফোর্ড,এইরি প্রভৃতি ভূ বিজ্ঞানীদের মত অনুসারে ভূ-অভ্যন্তরের 100 কিলোমিটার গভীরতায় অবস্থিত এই তলকে প্রতিবিধান তল বলে।যাকে ইংরেজী ভাষায় "level of compensation"বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য(Characteristics):-
A.প্রতিবিধান তল ঊর্ধ্ব গুরুমন্ডলের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরে অবস্থিত।
B.প্রতিবিধান তল বরাবর বিভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলি তাদের উচ্চতা ও ভরের পার্থক্য সত্বেও সমান তলে অবস্থান করে।
C.প্রতিবিধান তল এর নিচে অর্থাৎ নিম্ন গুরুমন্ডল থেকে কেন্দ্রমন্ডল পর্যন্ত এলাকায় ভূ-প্রাকৃতিক সমস্থিতির প্রভাব নেই।
D. প্রতিবিধান তল এর ওপরে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর উর্ধাংশ থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত এলাকা হলো ভূ প্রাকৃতিক সমস্থিতির প্রভাব এলাকা।
অভিকর্ষ বিচ্যুতি বা Gravity anomaly
পৃথিবীকে গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ তলের সাপেক্ষে মসৃণ কল্পনা করে অক্ষাংশ অনুযায়ী অভিকর্ষজমান হিসাব করা হয় যাকে তাত্ত্বিক বা প্রমাণ অভিকর্ষ বলে।*
আবার, ভূপৃষ্ঠ বন্ধুর ও অসমসত্ত্ব প্রকৃতির হওয়ায় অঞ্চল বিশেষে অভিকর্ষজ মান কম বেশি হয়, যাকে প্রকৃত বাস্তব মান বলা হয়।
পৃথিবী পৃষ্ঠের কোন বিন্দুর প্রকৃত বা বাস্তব অভিকর্ষজ মান থেকে তাত্ত্বিক অভিকর্ষজ মানের বিয়োগফলকে অভিকর্ষজ বিচ্যুতি বলে।
(নিরক্ষরেখায় এই মান সবচেয়ে কম ও মেরু বিন্দুতে অভিকর্ষজ মান সর্বাধিক হয়)
এইরির তত্ত্ব(theory of Airy):-
স্যার জর্জ এইরি 1855 খ্রিষ্টাব্দে তার সমস্থিতি তথ্যটি উপস্থাপন করেন।
এইরির তত্ত্বটি পদার্থের ভাসমানতা তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।
স্যার জর্জ এইরি তার এই তত্বটিতে বলেন হিমশৈল যেমন জলে ভেসে থাকে,তেমন মহাদেশীয় ভূখণ্ড অর্থাৎ সিয়াল মহাসাগরীয় ভূত্বক এর ওপর অর্থাৎ সীমার ওপর ভেসে রয়েছে।
সীমার ঘনত্ব 2.87 গ্রাম/ঘন সেমি এবং সিয়ালের ঘনত্ব 2.65 গ্রাম/ঘন সেমি।সুতরাং অধিক ঘনত্বের সীমা স্তরের মধ্যে পর্বত,মালভূমি,সমভূমি প্রভৃতি মহাদেশীয় ভূত্বকের বিভিন্ন অংশ ও তাদের উচ্চতা ও গভীরতা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত যে মহাদেশীয় অংশের উচ্চতা বেশি তার শিকর বা root অর্থাৎ গভীরতাও বেশি।
এই তত্ত্বের সমর্থনে একই ঘনত্ব যুক্ত বিভিন্ন উচ্চতাবিশিষ্ট কতগুলি কাঠের খন্ড একটি জলপূর্ণ পাত্রে তিনি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন।তিনি পর্যবেক্ষণ করে তিনি লক্ষ্য করেন কাঠের খন্ডগুলি স্বতন্ত্র ভাবে জলের উপরে ভাসছে।
জলের উপর ভাসমান খণ্ডগুলির উচ্চতা এক নয়।
জলের উপরে যে কাঠের খন্ডগুলির উচ্চতা বেশি সেগুলির জলে নিমজ্জনের গভীরতাও বেশি(1:10)।
জলের ওপরে কাঠের যে খন্ডগুলির উচ্চতা কম তার নিমজ্জনের গভীরতা কম।
বিভিন্ন উচ্চতাবিশিষ্ট সমঘনত্বযুক্ত কাঠের খন্ডগুলির এইরূপ ভাসমান অবস্থাকে Hydrostatic Equillibium বলা হয়।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন উচ্চতা বিশিষ্ট কয়েকটি তামারখণ্ড একটি পারদপূর্ণ পাত্রে ভাসিয়ে দেন এক্ষেত্রেও তিনি অনুরূপ চিত্র লক্ষ্য করেন।
প্রাটের তত্ত্ব (Theory of Pratt):-
1859 সালে গণিতজ্ঞ বিজ্ঞানী J.H. PRATT সমস্থিতি সম্পর্কে একটি আলাদা তত্ত্ব প্রস্তাব করেন।
তার তত্ত্বটি ভূত্বকীয় খন্ডগুলির ঘনত্বের পার্থক্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
(প্রতিপূরণের নিয়ম এর উপর প্রতিষ্ঠিত)
Pratt এর ধারণাটি বিষম ঘনত্ব ও সমগভীরতাকে নির্দেশ করে।
তিনি বলেন,ভূত্বকীয় খন্ডগুলির ভর তাদের ব্যাসের সমানুপাতিক এবং এদের ঘনত্ব বিভিন্ন।তাই অসমান ঘনত্ব বিশিষ্ট হলেও সমান ওজনের জন্য একই চাপ প্রয়োগ করে।
***ভূমিরূপের উচ্চতা ও তার ঘনত্বের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক আছে।উঁচু ভূমিরূপের ঘনত্ব কম আর নিচু ভূমিরূপের ঘনত্ব বেশি হয়।
লঘু ঘনত্ব যুক্ত মহাদেশ,পর্বত,মালভূমি এবং গুরু ঘনত্বযুক্ত মহাসাগর,সমভূমি,নিম্নভূমি ভূ অভ্যন্তরে একটি প্রতিপূরণ তলের প্রতি একক ক্ষেত্রমানের ওপর সমান চাপ প্রয়োগ করে নিজ-নিজ ঘনত্ব অনুসারে ভূপৃষ্ঠে যথাক্রমে বেশি উচ্চতায় এবং কম উচ্চতায় অবস্থান করে।
Pratt পারদ পূর্ণ পাত্রে সমান ব্যাসের ও বিভিন্ন ঘনত্বের রূপা,দস্তা,পাইরাইট,অ্যান্টিমনি,নিকেল,তামা, সিসাকে ভাসিয়ে লক্ষ্য করেন।তারা একটি প্রতিপূরণ তলের ওপর সমান চাপ দিয়ে বিভিন্ন উচ্চতায় থাকে।হালকা ধাতু খন্ড গুলি বেশি উচ্চতায় এবং ভারিগুলি ঘনত্ব অনুসারে কম উচ্চতায় অবস্থান করে।
* এই পরীক্ষা থেকে বলা যায় যে বস্তু যত হালকা প্রতিপূরণতল থেকে তার উচ্চতা ততবেশি হয়।
Many people search as these keywords like that প্রাটের সমস্থিতি মতবাদ,এইরির সমস্থিতি মতবাদ,সমস্থিতি মতবাদ,প্রাট এর তত্ব,airy ও pratt এর মতবাদের পার্থক্য,সমস্থিতি,সমস্থিতি কাকে বলে,সমস্থিতি কি,সমস্থিতি তত্ত্ব,সমস্থিতির ধারনা,সমস্থিতির তত্ত্ব,প্রতিপূরণ তল,ডাটন এরির তত্ত্ব,এরির তত্ব,একাদশ শ্রেণি,হিমালয় পর্বত,পর্বত সৃষ্টির কারন,একাদশ শ্রেণির ভূগোল,#প্লবতা,class 11 geography,geography class 11,isostasy,concept of isostasy,isostasy geology,theory of pratt,theory of airy,isostasy theory