Type Here to Get Search Results !

দশম শ্রেণী ইতিহাস - (ষষ্ঠ অধ্যায়) বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - WBBSE Madhyamik History Chapter 6 Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer

দশম  শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (ষষ্ঠ অধ্যায়) - WBBSE Class 10 Madhyamik History Chapter 6 Bish Sotoker Bharote Krishok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer 


বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / 
Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon - মাধ্যমিক ইতিহাস – "বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo" (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Chapter 6 Question and Answer 

দশম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo – সমস্ত প্রশ্ন উত্তর | বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo অধ্যায়ের সাজেশন প্রশ্ন উত্তর | WBBSE Class 10 Madhyamik History Chapter 6 Question and Answer | WBBSE Class 10th History Suggestion PDF | Madhyamik History Suggestion Chapter 6 | বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর

West Bengal  Class 10 History Solution Chapter 6

West Bengal  Board Class 10 History (ইতিহাস) Textbook Solution Chapter 6 বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question Answers by WBBSE Expert Teacher. West Bengal Board Class 10 History Solution Chapter 6. Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer Mock Test. 

500+ দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর / বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – West Bengal Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছো তোমরা ? আশাকরি তোমরা খুব ভালো আছো । আজকে আমরা আলোচনা করবো তোমাদের দশম ক্লাসের ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা সম্পর্কে । এই ষষ্ঠ অধ্যায়টি তোমাদের পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ তাই ষষ্ঠ অধ্যায় এর বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমরা এই লিখাটির মাধ্যমে দশম শ্রেণীর  ষষ্ঠ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর, এই বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের সাজেশন , কিকরে এই অধ্যায় থেকে উত্তর লিখতে হয়। দশম শ্রেণীর বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায় থেকে কিভাবে পড়বে সবকিছুই আলোচনা করবো। 

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer / দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Class 10 / WBBSE Madhyamik History / দশম শ্রেণীর ইতিহাস – ষষ্ঠ অধ্যায় "বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo" প্রশ্ন ও উত্তর | WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer / দশম শ্রেণির ইতিহাস (ষষ্ঠ অধ্যায়) বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo প্রশ্ন উত্তর (MCQ, SAQ, LAQ)/Class 10 / WBBSE Madhyamik History Six chapter questions and Answers (MCQ, SAQ, LAQ) / দশম শ্রেণির আমাদের পৃথিবী ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo | Class Ten Amader Prithibi / দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়)


বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) MCQ, সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর | দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – West Bengal Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer
শম  শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (ষষ্ঠ অধ্যায়) - WBBSE Class 10 Madhyamik History Chapter 6 Bish Sotoker Bharote Krishok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer

দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো । WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History 6th Chapter MCQ Questions and Answers | 

Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon MCQ Question and Answer
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো | MCQ Questions and Answers (Class Ten History Six chapter)

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো ; প্রতিটি প্রশ্নের মান -১

১. ‘দেশপ্রাণ’ বলা হয়-
(ক) সতীশচন্দ্র সামন্তকে
(খ) অরবিন্দ ঘোষকে
(গ) এন. জি. রঙ্গকে
(ঘ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে
উত্তরঃ-  (ঘ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে।

২. ‘কুনবি’ হল-
(ক) গুজরাটের এক কৃষক শ্রেণি
(খ) বাংলার এক কৃষক শ্রেণি
(গ) অসমের এক কৃষক শ্রেণি
(ঘ) নাগাল্যান্ডের এক কৃষক শ্রেণি
উত্তরঃ-  (ক) গুজরাটের এক কৃষক শ্রেণি ।

৩. ‘একা’ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন-
(ক) এন. জি. রঙ্গ
(খ) বিজয় সিং পথিক
(গ) মাদারি পাসি
(ঘ) বাবা রামচন্দ্র
উত্তরঃ-  (গ) মাদারি পাসি।

৪. সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন –
(ক) লালা লাজপত রায় 
(খ) চিত্তরঞ্জন দাশ 
(গ) দেওয়ান চমনলাল
(ঘ) চিত্তরঞ্জন দাশ
উত্তরঃ-  (ক) লালা লাজপত রায়

৫. সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের তৃতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন –
(ক) লালা লাজপত রায় 
(খ) ব্যোমকেশ চক্রবর্তী 
(গ) চিত্তরঞ্জন দাশ
(ঘ) দেওয়ান চমনলাল
উত্তরঃ-  D) দেওয়ান চমনলাল

৬. গান্ধিজির নেতৃত্বে প্রথম শ্রমিক আন্দোলন ছিল— 
(ক) খেদা সত্যাগ্রহ 
(খ) আমেদাবাদের মিল শ্রমিকের আন্দোলন 
(গ) শোলাপুর সুতাকল শ্রমিক ধর্মঘট 
(ঘ) আইন অমান্য আন্দোলন 
উত্তরঃ-  (খ) আমেদাবাদের মিল শ্রমিকের আন্দোলন

৭. ‘সর্বভারতীয় কিষান সভা’-র প্রথম সভাপতি ছিলেন-
(ক) এন. জি. রঙ্গ
(খ) ফজলুল হক
(গ) স্বামী সহজানন্দ
(ঘ) মানিকলাল বর্মা
উত্তরঃ-  (গ) স্বামী সহজানন্দ।

৮. ‘তেভাগা আন্দোলন’-টি হয়েছিল-
(ক) ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৫০-৫১ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (ক) ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে ।

৯. জাতীয় কংগ্রেসে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ছিলেন— 
(ক) মৌলানা আজাদ
(খ) বল্লভভাই প্যাটেল
(গ) মহাত্মা গান্ধি 
(ঘ) জওহরলাল নেহরু 
উত্তরঃ-  (ঘ) জওহরলাল নেহরু

১০. বহির্ভারতে সর্বপ্রথম যেখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি স্থাপিত হয়— 
(ক) প্যারিস
(খ) বার্লিন 
(গ) তাসখন্দ 
(ঘ) মস্কো 
উত্তরঃ-  তাসখন্দ

১১. তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা হয়— 
(ক) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে 
উত্তরঃ-  (ক) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে

১২. ‘লাঙল যার জমি তার’ স্লোগানটি কোন্ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ?
(ক) তেভাগা আন্দোলন
(খ) তেলেঙ্গানা আন্দোলন
(গ) অসহযোগ আন্দোলন
(ঘ) একা আন্দোলন
উত্তরঃ-  (ক) তেভাগা আন্দোলন।

১৩. তেলেঙ্গা কৃষক বিদ্রোহের সূচনা ঘটেছিল-
(ক) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (গ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।

১৪. তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন— 
(ক) মহঃ আলি 
(খ) এস এ ডাঙ্গে 
(গ) অবনী মুখার্জি 
(ঘ) এম এন রায় 
উত্তরঃ-  (ঘ) এম এন রায়

১৫. ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের জনক ছিলেন—
(ক) এস  এ ডাঙ্গে
(খ) মানবেন্দ্রনাথ রায় 
(গ) মুজাফফর আহমেদ 
(ঘ) সিঙ্গারাভেলু চেটিয়ার 
উত্তরঃ-  (খ) মানবেন্দ্রনাথ রায়

১৬. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ‘ মানবেন্দ্রনাথ রায় ‘ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন—  
(ক) রাশিয়ায় 
(খ) জাপানে 
(গ) আমেরিকায় 
(ঘ) জার্মানিতে
উত্তরঃ-  (গ) আমেরিকায়

১৭. রাম্পা উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল-
(ক) কোঙ্কন উপকূলে
(খ) গোদাবরী উপত্যকায়
(গ) করমণ্ডল উপকূলে
(ঘ) মালাবার উপকূলে
উত্তরঃ-  (খ) গোদাবরী উপত্যকায়।

১৮. রাম্পা বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটেছিল-
(ক) ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (ঘ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে।

১৯. এম এন রায়ের প্রকৃত নাম হল করেন –
(ক) মানবেন্দ্রনাথ রায়
(খ) নরেন্দ্রনাথ রায় 
(গ) নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য 
(ঘ) বিমলেন্দু রায় 
উত্তরঃ-  (গ) নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

২০. যে বড়োলাট বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করেন –
(ক) লর্ড রিপন 
(খ) লর্ড কার্জন 
(গ) লর্ড ডাফরিন 
(ঘ) লর্ড চেমসফোর্ড 
উত্তরঃ-  (খ) লর্ড কার্জন

২১. বঙ্গভঙ্গ যেদিন ঘোষিত হয়েছিল , তা হল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের –
(ক) ১৯ জুলাই 
(খ) ১৬ অক্টোবর 
(গ) ১৬ আগস্ট 
(ঘ) ১৬ জুন 
উত্তরঃ-  (ক) ১৯ জুলাই

২২. রাম্পা বিদ্রোহের নেতা ছিলেন-
(ক) মাদারি পাসি
(খ) মানিকলাল বর্মা
(গ) আল্লুরি সীতারাম রাজু
(ঘ) স্বামী সহজানন্দ
উত্তরঃ-  (গ) আল্লুরি সীতারাম রাজু ।

২৩. ভাইকম সত্যাগ্রহ ভারতের কোথায় হয়েছিল?
(ক) বাংলায়
(খ) পাঞ্জাবে
(গ) মহারাষ্ট্রে
(ঘ) রাজস্থানে
উত্তরঃ-  (গ) মহারাষ্ট্রে।

২৪. বঙ্গভঙ্গ কার্যকরী হয় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে –
(ক) ১৬ অক্টোবর 
(খ) ২৪ অক্টোবর 
(গ) ২৬ অক্টোবর 
(ঘ) ৩১ অক্টোবর 
উত্তরঃ-  (ক) ১৬ অক্টোবর

২৫. বঙ্গভঙ্গকে ‘ গভীর জাতীয় বিপর্যয় ‘ বলেছেন—
(ক) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(খ) সুরেন্দ্রনাথ সেন 
(গ) অরবিন্দ ঘোষ
(ঘ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল 
উত্তরঃ-  (ক) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

২৬. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল— 
(ক) ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে 
(খ) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে 
উত্তরঃ-  (গ) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে

২৭. ভাইকম সত্যাগ্রহের সূত্রপাত ঘটেছিল-
(ক) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (ক) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে।

২৮. আইন অমান্য আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল-
(ক) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (খ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে।

২৯. সর্বপ্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন –
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) কৃষ্ণকুমার মিত্র 
(গ) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(ঘ) অরবিন্দ ঘোষ 
উত্তরঃ-  (খ) কৃষ্ণকুমার মিত্র

৩০. বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী আন্দোলনকে এলিটিস্ট ( Elitist ) আন্দোলন বলেছেন , ঐতিহাসিক –
(ক) জে আর ম্যাকলেন /
(খ) উইল ডুরান্ট
(গ) ড . সুমিত সরকার
(ঘ) আর . এস . ত্রিপাঠী 
উত্তরঃ-  (গ) ড . সুমিত সরকার

৩১. বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়— 
(ক) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে 
(খ) ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে 
উত্তরঃ-  (ঘ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে

৩২. ভারত ছাড়ো আন্দোলন হয়েছিল-
(ক) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (ক) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে।

৩৩. ‘চম্পারণ কৃষি বিল’ কবে পাস হয়েছিল?
(ক) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (ক) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে।

৩৪. ভারতের গান্ধিজির প্রথম সত্যাগ্রহটি হল – 
(ক) খেদা সত্যাগ্রহ 
(খ) আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ
(গ) বারদৌলি সত্যাগ্রহ 
(ঘ) চম্পারণ সত্যাগ্রহ
উত্তরঃ-  (ঘ) চম্পারণ সত্যাগ্রহ

৩৫. ‘তিন কাঠিয়া ‘ প্রথার অর্থ হল –
(ক) বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমিতে নীলচাষ করা
(খ) কৃষকদের বাধ্যতামূলক তিন কাঠা জমি থাকা
(গ) বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমি পতিত রাখা
(ঘ) কাঠা প্রতি তিন পয়সা কর দেওয়া 
উত্তরঃ-  (ক) বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমিতে নীলচাষ করা

৩৬. ‘তিনকাঠিয়া প্রথা ‘ যে চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিল তা হল –
(ক) আফিং চাষ
(খ) নীল চাষ 
(গ) পাট চাষ 
(ঘ) তুলা চাষ 
উত্তরঃ-  (খ) নীল চাষ

৩৭. গান্ধিজি তাঁর ডান্ডি অভিযানের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন-
(ক) চৌরিচৌরা থেকে
(খ) প্রতাপগড় থেকে
(গ) ভাগলপুর থেকে
(ঘ) সবরমতি থেকে
উত্তরঃ-  (ঘ) সবরমতি থেকে।

৩৮. ‘নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ (AITUC)-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল-
(ক) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (গ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে।

৩৯. ‘দি সোশ্যালিস্ট’ পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন-
(ক) লালা লাজপত রায়
(খ) এস. এ ডাঙ্গে
(গ) এম. এন. রায়
(ঘ) সি. চেট্টিয়ার
উত্তরঃ-  (খ) এস. এ ডাঙ্গে ।

৪০. ভারতে প্রথমবার ‘মে দিবস’ পালিত হয়েছিল-
(ক) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১ মে
(খ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১ মে
(গ) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১ মে
(ঘ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১ মে
উত্তরঃ-  (গ) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১ মে ।

৪১. AITUC-এর প্রথম সভাপতি-
(ক) লালা লাজপত রায়
(খ) বি.জি. তিলক
(গ) এস. এ. ডাঙ্গে
(ঘ) লালা হরদয়াল
উত্তরঃ-  (ক) লালা লাজপত রায়।

৪২. ‘মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন’ কে গঠন করেন?
(ক) বি. পি. ওয়াদিয়া
(খ) এস. এ. ডাঙ্গে
(গ) বি. জি. তিলক
(ঘ) এম. এন. রায়
উত্তরঃ-  (ক) বি. পি. ওয়াদিয়া।

৪৩. তিনকাঠিয়া প্রথার অবসান ঘটে –
(ক) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে 
উত্তরঃ-  (ক) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে

৪৪. চম্পারণ কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন – 
(ক) দুর্গাপাল সিং 
(খ) মহাত্মা গান্ধি 
(গ) জওহরলাল নেহরু
(ঘ) বাবা রামচন্দ্ৰ 
উত্তরঃ-  (খ) মহাত্মা গান্ধি 

৪৫. ভারতে গান্ধিজির দ্বিতীয় সত্যাগ্রহটি হল –
(ক) চম্পারণ সত্যাগ্রহ 
(খ) আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ 
(গ) বারদৌলি সত্যাগ্রহ 
(ঘ) খেদা সত্যাগ্রহ 
উত্তরঃ-  (খ) আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

৪৬. ‘মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠিত হয়-
(ক) ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (খ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে।

৪৭. ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়নটির নাম হল-
(ক) কলকাতা লেবার ইউনিয়ন
(খ) পাটনা লেবার ইউনিয়ন
(গ) সুরাট লেবার ইউনিয়ন
(ঘ) মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন
উত্তরঃ-  (ঘ) মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন।

৪৮. ‘কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল’-এর প্রতিষ্ঠাতা-
(ক) এস. এ. ডাঙ্গে
(খ) লালা লাজপত রায়
(গ) জয়প্রকাশ নারায়ণ
(ঘ) সি. চেট্টিয়ার
উত্তরঃ-  (গ) জয়প্রকাশ নারায়ণ।

৪৯. আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের ফলে মিল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে –
(ক) ১৫ শতাংশ 
(খ) ২৫ শতাংশ
(গ) ৩০ শতাংশ 
(ঘ) ৩৫ শতাংশ 
উত্তরঃ-  (ঘ) ৩৫ শতাংশ

৫০. গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতে তৃতীয় সত্যাগ্রহটি হল— 
(ক) চম্পারণ সত্যাগ্রহ 
(খ) বারদৌলি সত্যাগ্রহ 
(গ) আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ 
(ঘ) খেদা সত্যাগ্রহ 
উত্তরঃ-  (ঘ) খেদা সত্যাগ্রহ

৫১. গান্ধিজির নেতৃত্বে খেদা সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়— 
(ক) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে 
(খ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে 
উত্তরঃ-  (খ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে

৫২. ‘লাঙল’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
(ক) কাজী নজরুল ইসলাম
(খ) এস. এ. ডাঙ্গে
(গ) পি.সি. যোশী
(ঘ) সি. চেট্টিয়ার
উত্তরঃ-  (ক) কাজী নজরুল ইসলাম।

৫৩. ‘গণবাণী’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন-
(ক) সামসউদ্দিন হোসেন
(খ) কাজী নজরুল ইসলাম
(গ) পি.সি. যোশী
(ঘ) মুজাফ্ফর আহমেদ
উত্তরঃ-  (ঘ) মুজাফ্ফর আহমেদ।

৫৪. ইন্দুলাল যাজ্ঞিক যুক্ত ছিলেন— 
(ক) খেদা সত্যাগ্রহে 
(খ) চম্পারণ সত্যাগ্রহে 
(গ) আমেদাবাদ সত্যাগ্রহে 
(ঘ) বারদৌলি সত্যাগ্রহে 
উত্তরঃ-  (ক) খেদা সত্যাগ্রহে

৫৫. গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহের মাধ্যমে শহরের শিক্ষিত ও গ্রামীণ কৃষকদের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটান , সেটি হল—
(ক) খেদা সত্যাগ্রহ 
(খ) আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ 
(গ) অহিংস সত্যাগ্রহ 
(ঘ) চম্পারণ সত্যাগ্রহ 
উত্তরঃ-  (ঘ) চম্পারণ সত্যাগ্রহ

৫৬. বিজোলিয়া সত্যাগ্রহ ( ১৯১৬  খ্রিস্টাব্দে ) সংগঠিত হয়— 
(ক) রাজস্থানে 
(খ) অযোধ্যায় 
(গ) গুজরাতে 
(ঘ) বাংলায় 
উত্তরঃ-  (ক) রাজস্থানে 

৫৭. ‘বারদৌলি সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল বারদৌলি অবস্থিত-
(ক) রাজস্থানে
(খ) পাঞ্চাবে
(গ) গুজরাটে
(ঘ) বিহারে
উত্তরঃ-  (গ) গুজরাটে ।

৫৮. ‘বারদৌলি সত্যাগ্রহ’ টি হয়েছিল-
(ক) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (খ) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে।

৫৯. বিজোলিয়া সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন –
(ক) বিনয় সিং পথিক ও মানিকলাল ভার্মা 
(খ) মদনমোহন মালব্য 
(গ) জয়নারায়ণ ব্যাস 
(ঘ) ভূপ সিং
উত্তরঃ-  (ক) বিনয় সিং পথিক ও মানিকলাল ভার্মা

৬০. দ্বারভাঙ্গা কিষাণ আন্দোলনের ( ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ) নেতৃত্ব দেন –
(ক) স্বামী বিদ্যানন্দ
(খ) মোতিলাল তেজবন্ত
(গ) বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ
(ঘ) মানিকলাল ভার্মা 
উত্তরঃ-  (ক) স্বামী বিদ্যানন্দ

৬১. রাম্পা উপজাতির বাস ছিল— 
(ক) কাবেরী উপত্যকায় 
(খ) নর্মদা উপত্যকায় 
(গ) গোদাবরী উপত্যকায় 
(ঘ) গাঙ্গেয় উপত্যকায় 
উত্তরঃ-  (গ) গোদাবরী উপত্যকায়

৬২. মোপলা বিদ্রোহটি হয়েছিল-
(ক) কোঙ্কন উপকূলে
(খ) গোদাবরী উপত্যকায়
(গ) করমণ্ডল উপকূল
(ঘ) মালাবার উপকূলে
উত্তরঃ-  (ঘ) মালাবার উপকূলে ।

৬৩. বঙ্গভঙ্গের দিন ঘোষিত হয়েছিল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের-
(ক) ৬ অক্টোবর
(খ) ১৬ অক্টোবর
(গ) ২০ অক্টোবর
(ঘ) ২৫ অক্টোবর
উত্তরঃ-  (গ) ২০ অক্টোবর।

৬৪. রাম্পা উপজাতি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন– 
(ক) মাদারি পাশি 
(খ) বাবা রামচন্দ্র 
(গ) স্বামী বিদ্যানন্দ 
(ঘ) আপ্লুরি সীতারাম রাজু 
উত্তরঃ-  (ঘ) আপ্লুরি সীতারাম রাজু

৬৫. সর্বভারতীয় গণরাজনীতির রূপকার ছিলেন— 
(ক) মহাত্মা গান্ধি 
(খ) বল্লবভাই প্যাটেল 
(গ) গোপালকৃয় গোখলে 
(ঘ) সুভাষচন্দ্র বসু 
উত্তরঃ-  (ক) মহাত্মা গান্ধি

৬৬. অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় –
(ক) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে 
(খ) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে 
উত্তরঃ-  (গ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে

৬৭. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল-
(ক) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (ক) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে।

৬৮. বীরেন্দ্রনাথ শাসমল পরিচিত ছিলেন যে নামে –
(ক) দেশপ্রাণ 
(খ) দেশপ্রিয় 
(গ) দেশবন্ধু
(ঘ) দেশ দাস 
উত্তরঃ-  (ক) দেশপ্রাণ

৬৯. অসহযোগ আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরে কৃষকদের কর বন্ধ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন –
(ক) আক্রাম খাঁ 
(খ) ফজলুল হক 
(গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল
(ঘ) বঙ্কিম মুখার্জি
উত্তরঃ-  (গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

৭০. ‘চৌরিচৌরার ঘটনা’ ঘটেছিল-
(ক) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ-  (খ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে।

৭১. অসহযোগ আন্দোলনের প্রতীক ছিল –
(ক) গীতা 
(খ) চরকা 
(গ) সিংহ 
(ঘ) লাঠি 
উত্তরঃ-  (খ) চরকা

৭২. অসহযোগ আন্দোলনকালে মেদিনীপুরের কৃষক আন্দোলনের নেতা ছিলেন –
(ক) ধরণী মণ্ডল 
(খ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল 
(গ) নজরুল ইসলাম 
(ঘ) সুশীল কুমার ধাড়া 
উত্তরঃ-  (খ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

৭৩. মোপলা বিদ্রোহ হয় –
(ক) মালাবার উপকূলে 
(খ) কাথিয়াবাড়ে 
(গ) কোঙ্কন উপকূলে
(ঘ) মাদ্রাজে
উত্তরঃ-  (ক) মালাবার উপকূলে

৭৪. বীরেন্দ্রনাথ শাসমল কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন— 
(ক) বিহারে 
(খ) যুক্তপ্রদেশে 
(গ) রাজস্থানে 
(ঘ) বাংলাতে 
উত্তরঃ-  (ঘ) বাংলাতে 

৭৫. উত্তরপ্রদেশ কিষাণসভা গঠন –
(ক) জওহরলাল নেহরু 
(খ) মাদারি পাশি করেন
(গ) ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ 
(ঘ) বাবা রামচন্দ্র
উত্তরঃ-  D) বাবা রামচন্দ্র

৭৬. মালাবারে মোপলা সম্প্রদায় ছিল— 
(ক) জাঠ কৃষক 
(খ) হিন্দু কৃষক 
(গ) মুসলিম কৃষক
(ঘ) উপজাতি কৃষক
উত্তরঃ-  (গ) মুসলিম কৃষক

৭৭. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনকালে উত্তরপ্রদেশে কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন –
(ক) লালা লাজপত রায়
(খ) বল্লভভাই প্যাটেল 
(গ) বাবা রামচন্দ্র
(ঘ) মাদারি পাশি
উত্তরঃ-  (গ) বাবা রামচন্দ্র

৭৮. ভারতে প্রথম মে  দিবস পালিত হয় –
(ক) বোম্বাই – এ
(খ) কলকাতায় 
(গ) দিল্লিতে
(ঘ) মাদ্রাজ – এ 
উত্তরঃ-  (ঘ) মাদ্রাজ – এ

৭৯. সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন –
(ক) লালা লাজপত রায় 
(খ) চিত্তরঞ্জন দাশ 
(গ) দেওয়ান চমনলাল
(ঘ) চিত্তরঞ্জন দাশ
উত্তরঃ-  (ক) লালা লাজপত রায়

৮০. নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস ‘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – 
(ক) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে 
(খ) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে 
উত্তরঃ-  (গ) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে



দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) সত্য মিথ্যা যাচাই করো । WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History 6th Chapter Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer True & False 

সত্য মিথ্যা যাচাই করো | True & False Questions and Answers (Class Ten History Six chapter)

শূন্যস্থান পূরন করো ; প্রতিটি প্রশ্নের মান -১




দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) শূন্যস্থান পূরণ করো । WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History 6th Chapter Fill in the blank Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Questions and Answers 

শূন্যস্থান পূরণ করো  | Fill in the blank Questions and Answers (Class Ten History Six chapter) 

সত্য / মিথ্যা নির্ণয় করো; প্রতিটি প্রশ্নের মান -১



দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়) এক কথায় উত্তর দাও । WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History 6th Chapter SAQ Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer 

এক কথায় উত্তর দাও | SAQ Questions and Answers (Class Ten History Six chapter)

এক কথায় উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান -১

১. খেদা সত্যাগ্রহে গান্ধিজির সহযোগী কারা ছিলেন ? 
উত্তরঃ-  খেদা সত্যাগ্রহে গান্ধিজির সহযোগী ছিলেন বল্লভভাই প্যাটেল এবং ইন্দুলাল যাজ্ঞিক । 

২. ‘চম্পারণ সত্যাগ্রহ হল সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে গান্ধিজির উত্থানের প্রথম পদক্ষেপ ‘ — উক্তিটি কার ? 
উত্তরঃ-  আলোচ্য উক্তিটি ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের । 

৩. অসহযোগ আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরে কার নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  অসহযোগ আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরে বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল । 

৪. অসহযোগ আন্দোলনকালে ঝিঙ্গুরি সিং ও দুর্গাপাল সিং কোন্ অঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ? 
উত্তরঃ-  অসহযোগ আন্দোলনকালে ঝিঙ্গুরি সিং ও দুর্গাপাল সিং রায়বেরিলি প্রতাপগড় কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ।

৫. মতিলাল তেজাওয়াত কে ? 
উত্তরঃ-  মতিলাল তেজাওয়াত মেবারের ভিল উপজাতিদের নেতা ছিলেন । 

৬. ‘ নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতীক ’ কাকে বলা হয় ? 
উত্তরঃ-  মহাত্মা গান্ধিকে ‘ নিপীড়িত মানবাত্মার প্রতীক ‘ বলা হয় ।  

৭. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় কে কৃষকদের খাজনা বন্ধের তত্ত্ব বাতিল করেন ? 
উত্তরঃ-  বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় অরবিন্দ ঘোষ কৃষকদের খাজনা বন্ধের তত্ত্ব বাতিল করেন । 

৮. স্বদেশি আন্দোলনের প্রতি কৃষক শ্রেণির অনীহা ছিল কেন ? 
উত্তরঃ-  জাতীয় কংগ্রেসের জোতদার ও জমিদার – ঘেঁষা নীতির কারণে স্বদেশি আন্দোলনের প্রতি কৃষক শ্রেণির অনীহা ছিল । 

৯. ভারতের কোন রাজনৈতিক আন্দোলনে গান্ধিজি প্রথম সত্যাগ্রহের আদর্শ অনুসরণ করেন ? 
উত্তরঃ-  গান্ধিজি বিহারের চম্পারণে ( ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ ) প্রথম সত্যাগ্রহের আদর্শ অনুসরণ করেন । 

১০. কবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় ? 
উত্তরঃ-  ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় । 

১১. কে বঙ্গভঙ্গ করেন ? 
উত্তরঃ-  বড়োলাট লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ করেন ।

১২. কবে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় ? 
উত্তরঃ-  ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় । 

১৩. মহাত্মা গান্ধির রাজনৈতিক গুরু কে ছিলেন ? 
উত্তরঃ-  মহাত্মা গান্ধির রাজনৈতিক গুরু ছিলেন গোপালকৃষ গোখলে । 

১৪. কত খ্রিস্টাব্দে ‘ চম্পারণ কৃষি বিল ‘ পাস হয় ? 
উত্তরঃ-  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ চম্পারণ কৃষি বিল ‘ পাস হয় ।

১৫. অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন মালাবার উপকূলে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনটির নাম কী ? 
উত্তরঃ-  অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন মালাবার উপকূলে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনটির নাম মোপলা বিদ্রোহ ।

১৬. গোদাবরী অঞ্চলে আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ ( ১৯২২-২৪ খ্রি . ) কী নামে পরিচিত ? 
উত্তরঃ-  গোদাবরী অঞ্চলে আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ রাম্পা বিদ্রোহ নামে পরিচিত । 

১৭. রাম্পা বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন ? 
উত্তরঃ-  রাম্পা বিদ্রোহের নেতা ছিলেন আব্বুরি সীতারাম রাজু । 

১৮. বারদৌলি সত্যাগ্রহ কবে হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  বারদৌলি সত্যাগ্রহ ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল । 

১৯. কে বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন ? 
উত্তরঃ-  বক্সবভাই প্যাটেল বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন । 

২০. একা কৃষক আন্দোলনে কে নেতৃত্ব দিয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  মাদারি পাশি একা কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল । 

২১. ‘ একা ’ আন্দোলন কোথায় হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  একা আন্দোলন উত্তরপ্রদেশে হয়েছিল । 

২২. ” নিজ খামারে ধান তোলো ” স্লোগানটি কোন্ আন্দোলনের ? 
উত্তরঃ-  “ নিজ খামারে ধান তোলো ” —স্লোগানটি বাংলার তেভাগা আন্দোলনের ( ১৯৪৬ ) । 

২৩. মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়নের ( ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ ) বর্ণধার কারা ছিলেন ? 
উত্তরঃ-  বি পি ওয়াদিয়া ছিলেন মাম্রাজ লেবার ইউনিয়নের প্রধান উদ্যোক্তা । 

২৪. লন্ডনে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার লিগ করে প্রতিষ্ঠিত হয় ? 
উত্তরঃ-  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় । 

২৫. সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ( AITUC ) কবে গঠিত হয় ? 
উত্তরঃ-  ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হয় । 

২৬. AITUC- র প্রথম অধিবেশন কোথায় বসে ? 
উত্তরঃ-  AITUC- র প্রথম অধিবেশন বসে বোম্বাই – এ । 

২৭. AITUC- র বাংলা নাম কী ? 
উত্তরঃ-  AITUC- র বাংলা নাম হল নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন ।

২৮. AITUC কবে প্রতিষ্ঠিত হয় । 
উত্তরঃ-  ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে AITUC প্রতিষ্ঠিত হয় । 

২৯. AITUC- র প্রথম সভাপতি কে ছিলেন ? 
উত্তরঃ-  AITUC- র প্রথম সভাপতি ছিলেন লালা লাজপত রায় । 

৩০. কত জন প্রতিনিধি AITUC- র প্রথম অধিবেশনে প্রতিনিধিত্ব করেছিল ? 
উত্তরঃ-  AITUC- র প্রথম অধিবেশনে প্রতিনিধিত্ব করেছিল ৮০৬ জন । 

৩১. বারদৌলি সত্যাগ্রহ ‘ কোথায় হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  বারদৌলি সত্যাগ্রহ গুজরাটের বারদৌলিতে হয়েছিল ।

৩২. আইন অমান্য আন্দোলনের প্রধান নেতা কে ছিলেন ? 
উত্তরঃ-  আইন অমান্য আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মহাত্মা গান্ধি । 

৩৩. কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কোথায় খাজনা দেওয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় ? 
উত্তরঃ-  কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয় । 

৩৪. বাংলার কৃষক প্রজা পার্টি কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? 
উত্তরঃ-  বাংলার কৃষক – প্রজা পার্টি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ( ৪ জুলাই ) প্রতিষ্ঠিত হয় । 

৩৫. বাংলায় ‘ কৃষক প্রজাপার্টি ’ কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 
উত্তরঃ-  বাংলায় ‘ কৃষক প্রজাপাটি ‘ প্রতিষ্ঠা করেন এ কে ফজলুল হক । 

৩৬. তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 
উত্তরঃ-  তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেন সতীশচন্দ্র সামন্ত । 

৩৭. তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? 
উত্তরঃ-  তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ( ১৭ ডিসেম্বর ) । 

৩৮. ‘ ভগিনী সেনা ’ কোথায় গঠিত হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  ‘ ভগিনী সেনা ‘ মেদিনীপুরে গঠিত হয়েছিল । 

৩৯. বাংলার কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক কী ছিল ? 
উত্তরঃ-  বাংলার কৃষক – প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙ্গল । 

৪০. ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার কৃষক প্রজা পার্টির সভাপতি কে হন ? 
উত্তরঃ-  ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার কৃষক প্রজা পার্টির সভাপতি এ কে ফজলুল হক । 

৪১. ভারত ছাড়ো আন্দোলন কবে শুরু হয় ? 
উত্তরঃ-  ভারত ছাড়ো আন্দোলন ৮-৯ আগস্ট , ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় । 

৪২. ‘ বখস্ত ‘ আন্দোলন কোথায় হয় ? 
উত্তরঃ-  বিহারে ‘ বখস্ত ‘ আন্দোলন হয় । 

৪৩. বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভার নেতৃত্বে পরিচালিত ( ১৯৪৬ খ্রি . ) আন্দোলন কোনটি ? 
উত্তরঃ-  তেভাগা আন্দোলন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভার নেতৃত্বে পরিচালিত ( ১৯৪৬ খ্রি . ) আন্দোলন । 

৪৪. তেভাগা কথার অর্থ কী ? 
উত্তরঃ-  তেভাগা কথার অর্থ উৎপন্ন ফসলের ২/৩ অংশ কৃষকদের দিতে হবে ।

৪৫. ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন কোনটি ? 
উত্তরঃ-  মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন ( ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ ) ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন । 

৪৬. তেভাগা আন্দোলনের একজন নেতার নাম লেখো । 
উত্তরঃ-  তেভাগা আন্দোলনের একজন নেতার নাম চারু মজুমদার । 

৪৭. “ আধি নয় , তেভাগা চাই ” —কোন আন্দোলনের স্লোগান ! 
উত্তরঃ-  “ আধি নয় , তেভাগা চাই ” — তেভাগা আন্দোলনের ( ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ ) স্লোগান । 

৪৮. আমেদাবাদে বস্ত্রশিল্প ধর্মঘট করে হয় ? 
উত্তরঃ-  আমেদাবাদে বস্ত্রশিল্প ধর্মঘট হয় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ।

৪৯. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ ) প্রথম কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয় ? 
উত্তরঃ-  ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ ) প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় রাশিয়ার তাসখন্দে । 

৫০. ভারতে গান্ধিজির প্রথম অনশন সত্যাগ্রহ কোনটি ? 
উত্তরঃ-  আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ ভারতে গান্ধিজির প্রথম অনশন সত্যাগ্রহ ছিল ।



দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়)" সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর" । WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History 6th Chapter SAQ Questions and Answers 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর | SAQ Questions and Answers (Class Ten History Six chapter)

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর; প্রতিটি প্রশ্নের মান -২/৩/৪ 

১. বারদৌলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ) – টীকা লেখো।
অথবা, বারদৌলি সত্যাগ্রহ সম্পর্কে যা জানো লিখ। 

উত্তরঃ-   গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে সরকার ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ৩০ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করলে এখানকার হিন্দু ও মুসলমান কৃষকরা কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, তা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে খ্যাত।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ ও বল্লভভাই প্যাটেল –

খাজনা বন্ধ – ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলিতে আসেন এবং কৃষকদের খাজনা বন্ধ করার শপথ নিতে নির্দেশ দেন। হিন্দু কৃষকরা গীতা এবং মুসলিম কৃষকরা কোরাণ ছুঁয়ে শপথ নেয় যে, সরকার প্রচলিত হারে খাজনা নিতে রাজী না হলে খাজনা প্রদান বন্ধ করা হবে। এরপর বারদৌলি সত্যাগ্রহ অর্থ শুরু হয়।

১৩টি অঞ্চল – প্যাটেল বারদৌলি তালুককে ১৩টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চলে অভিজ্ঞ নেতার হাতে আন্দোলন পরিচালনার ভার দেন। বারদৌলি থেকে সত্যাগ্রহ পত্রিকা প্রকাশ করা হয়।

আন্দোলনে বাইরের সমর্থন – বারদৌলির কৃষকদের সমর্থনে বোম্বাই প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়। সর্বস্তরের মানুষ এই সত্যাগ্রহকে শামিল হয়েছিল।

মহিলা নেতৃবৃন্দ – মধুবেন প্যাটেল, মণিবেন প্যাটেল, ভক্তিবাদ, শারদা মেহতা প্রমুখ দেশপ্রেমী নারীরা বারদৌলি সত্যাগ্রহে শামিল হয়। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে যে, বারদৌলির মহিলারা বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে অভিভূত হয়ে তাঁকে সর্দার অভিধায় ভূষিত করেছিলেন।

উপসংহার – আন্দোলনের ব্যাপকতায় সরকার বিচলিত হয়ে একটি তদন্ত কমিশন বসাতে বাধ্য হয়। এই কমিশন রিপোর্ট দেয় যে, এই খাজনা বৃদ্ধি ছিল অন্যায় ও অবিবেচনাপ্রসূত কাজ। এই কমিশন ৬.০৩ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি অনুমোদন করে। অবশেষে কৃষকরাও এই সংশোধিত হারে খাজনা দিতে সম্মত হলে বারদৌলি সত্যাগ্রহের পরিসমাপ্তি ঘটে।

২. তেভাগা আন্দোলন কী ? 
উত্তরঃ-  ভারতের স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে ( ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে ) বঙ্গীয় কৃষক সভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে ভাগচাবি আন্দোলন শুরু হয় তা ‘ তেভাগা আন্দোলন ‘ নামে খ্যাত । এই আন্দোলনের মূল কথা ছিল বর্গাদারগণ যে জমিতে চাষ করে সেই জমিতে তাদের স্বত্ত্ব প্রদান করা , যতদিন না তা সম্ভব ততদিন উৎপন্ন ফসলের ২/৩ ভাগ ( দুই তৃতীয়াংশ ) তাদের প্রদান করা । সমগ্র বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল । 


৩. ‘ হালি প্রথা ‘ ও যজমানি প্রথা কী ? 
উত্তরঃ-  জমিদারের জমিতে চাষি কর্তৃক বিনা পারিশ্রমিকে নিজের গোরু – লাঙল দ্বারা আবাদ করে দেওয়াকে ‘ হালিপ্রথা ‘ বলা হত । অন্যদিকে , নিম্নবর্গের চাষিদের বড়ো জমিদার বা উচ্চবর্ণের তালুকদারদের বাজার অপেক্ষা কম দামে ঘি , চামড়া , কাঠ , কাপড় সরবরাহ করার প্রথাকে যজমানি প্রথা বলে । এই দুই প্রথা উত্তরপ্রদেশে বহুল প্রচলিত ছিল । 



৪. শশীভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিখ্যাত কেন ? 
উত্তরঃ-  শশীভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিখ্যাত ছিলেন , কারণ— প্রথমত , তিনি ছিলেন একজন ব্রাষ্মনেতা , মানবতাবাদী ও শ্রমিকদরদি । দ্বিতীয়ত , তিনি কলকাতার বরাহনগরের পাট – শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য ‘ শ্রমজীবী সমিতি ‘ ( ১৮৭০ খ্রি . ) গঠন ও ‘ ভারত শ্রমজীবী ’ ( ১৮৭৪ খ্রি . ) নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করে শ্রমিকদের আত্মনির্ভর ও মিতব্যয়ী হয়ে ওঠার পরামর্শ দেন । তৃতীয়ত , শ্রমিক উন্নতির জন্য তিনি একাধিক নৈশ বিদ্যালয় এবং সুরাপান নিবারণী সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন । 

৫. তেলেঙ্গানা আন্দোলন কেন সংগঠিত হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  ভারতের অন্যতম দেশীয় রাজ্য হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে জমিদারের জমিতে বাধ্যতামূলক বেগার শ্রম ( বেটি প্রথা ) ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট দল পরিচালিত এক দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহ তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ নামে খ্যাত । নিজামের স্বৈরাচারী শাসন ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার গ্রামের কৃষক সম্প্রদায় এই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল । পিসি সুন্দরাইয়া , রবিনারায়ণ রেড্ডি , ইয়েলো রেড্ডি প্রমুখ ছিলেন এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী উল্লেখযোগ্য নেতা । 


৬. সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজি পরিচালিত তিনটি সত্যাগ্রহ কী কী ? 
উত্তরঃ-  সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজির নেতৃত্বে তিনটি আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ পরিচালিত হয়েছিল । এইগুলি হল- ( ১ ) বিহারের চম্পারণ জেলায় নীলচাষিদের স্বার্থরক্ষার জন্য চম্পারণ সত্যাগ্রহ ( ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ ) , ( ২ ) সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকদের নিয়ে খেদা সত্যাগ্রহ ( ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ ) এবং ( ৩ ) আমেদাবাদ সুতাকল শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ ( ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ ) । 

৭. তেভাগা আন্দোলনের কয়েকজন নেতা – নেত্রীর নাম লেখো । 
উত্তরঃ-  তেভাগা আন্দোলনের কয়েকজন নেতা – নেত্রীর নাম হল- গুরুদাস তালুকদার , অবনী রায় , সুনীল সেন , গজেন মালি , সময় গাঙ্গুলি , জলপাইগুড়ির রাজবংশী মহিলা বুড়িমা , চারু মজুমদার , মহম্মদ দানেশ প্রমুখ । 

৮. সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে গান্ধীজি পরিচালিত কৃষক আন্দোলনের বিবরণ দাও।
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেই গান্ধিজি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেননি। এইসময় মহাত্মা গান্ধি কয়েকটি আঞ্চলিক কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যথা —

বিহারে চম্পারণ সত্যাগ্রহ এবং গুজরাটের খেদা সত্যাগ্রহ।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ – 
বিহারের চম্পারণ জেলায় নীলচাষীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি চম্পারণ সত্যাগ্রহ শুরু করেন। চম্পারণে নীলকর সাহেবরা তিনকাঠিয়া প্রথায় কৃষকদের নীলচাষ করতে এবং উৎপাদিত নীল নির্দিষ্ট দামে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করত। এভাবে নীলকর সাহেবরা চাষীদের ওপর অবাধ শোষণ চালাত। কিষাণনেতা রাজকুমার শুক্লার অনুরোধে গান্ধিজি বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ, ব্রজকিশোর প্রসাদ, অধ্যাপক কৃপালিনী, মহাদেব দেশাই প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে চম্পারণে যান এবং কৃষকদের নিয়ে চম্পারণ সত্যাগ্রহ শুরু করেন। সরকার এই আন্দোলনের চাপে একটি অনুসন্ধান কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয় — যার অন্যতম সদস্য ছিলেন গান্ধিজি স্বয়ং।

খেদা সত্যাগ্রহ – 
গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকদের নিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজি খেদা সত্যাগ্রহ শুরু করেন। এখানকার কৃষকরা ধান ও গমচাষের পাশাপাশি তামাক ও তুলোচাষ করত। ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি জনিত কারণে কৃষকরা খাজনা হ্রাসের দাবি তোলেন। সরকার সাড়া না দেওয়ায় গান্ধিজি মোহনলাল পান্ডা, বল্লভভাই প্যাটেল, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখ নেতাদের নিয়ে খেদার কৃষকদের একত্রিত করে বয়কট সত্যাগ্রহ শুরু করে। এর ফলে খাজনা দেওয়ার জন্য কৃষকদের ওপর চাপ বন্ধ হয়।

চম্পারণ ও খেদা আন্দোলনের ফলে

গান্ধিজির নেতৃত্বের প্রতি দেশবাসীর আস্থা অর্জন হয় । ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, চম্পারণের আন্দোলনের ফলে কৃষকদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং গান্ধিজির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের সাফল্য সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে তাঁর উত্থানের পথ প্রশস্ত করে।

৯. ভারত ছাড়ো আন্দোলন কেন সংগঠিত হয়ে ছিল  ? 
উত্তরঃ-  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি ক্রিপস মিশনে উপেক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ভারতে ইংল্যান্ডের উপস্থিতির কারণে জাপানের আক্রমনের সম্ভাবনা দেখা দেয় । 

১০. ‘ তিনকাঠিয়া প্রথা ‘ কী ? 
উত্তরঃ-  বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবরা চাষিদের বিঘা প্রতি ( ২০ কাঠার মধ্যে তিন কাঠা অর্থাৎ , ৩/২০ অংশ ) জমিতে নীলচাষ ও নির্দিষ্ট দামে উৎপাদিত নীল নীলকর সাহেবদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য থাকত । এই ব্যবস্থাই ‘ তিনকাঠিয়া প্রথা ’ নামে পরিচিত । দ্বিতীয়ত , এখানের কৃষকদের জমি থেকে উৎখাত করা হত এবং মালিকের জমি ও খামারে বিনা মজুরিতে কৃষকদের বেগার শ্রম করতে বাধ্য করা হত । তৃতীয়ত , কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের উদ্যোগও এই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট রচনায় সাহায্য করে ।

১১. রাম্পা বিদ্রোহ কী ? 
উত্তরঃ-  অসহযোগ আন্দোলনের শেষপর্যায়ে অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী অঞ্চলে আধুরী সীতারাম রাজুর নেতৃত্বে স্থানীয় উপজাতিদের বিদ্রোহকে রাম্পা বিদ্রোহ ( ১৯২২-২৪ খ্রি . ) বলা হয় । এই বিদ্রোহের কারণগুলি হল — স্থানীয় উপজাতিদের অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা , ঝুম চাষের ওপর রাজস্ব আরোপ করা এবং মহাজনি শোষণ বৃদ্ধি । এই সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদে সীতারাম রাজু বিদ্রোহ করলে শেষ পর্যন্ত তাকে বন্দি ও হত্যা করা হয় ( মে , ১৯২৪ খ্রি . ) । 

১২. সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত আমেদাবা সত্যাগ্রহের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজির নেতৃত্বে আমেদাবাদ সুতাকল শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে যে শ্রমিক সত্যাগ্রহ আন্দোলন হয়, তা আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ নামে খ্যাত।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে আমেদাবাদের শ্রমিকদের মধ্যে নানা অসন্তোষ জমা হচ্ছিল। বারবার বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সোচ্চার হলেও সরকার নীরব থাকে। এদিকে মালিক পক্ষও শ্রমিকদের দাবি মেটাতে অস্বীকৃত হন। এমতাবস্থায় ৫০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের ধর্মঘটে শামিল হয়ে গান্ধীজি অনশন শুরু করেন — যা ছিল ভারতে গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত প্রথম অনশন সত্যাগ্রহ। সারা ভারতে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তিনদিনের মধ্যেই মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে ৩৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি করে। এই আন্দোলনের সাফল্য শহরের শ্রমিকদের কাছেও গান্ধিজিকে জনপ্রিয় করে তোলে।

গুরুত্ব –

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহের গুরুত্বগুলি হল —

শ্রমিক নেতা হিসেবে গান্ধিজির উত্থান ঘটে এবং তিনিই প্রথম শ্রমিক শ্রেণির প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন।
রাজনীতিতে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে অনশন একটা নতুন হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
গান্ধিজির প্রভাবে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষালাভ করে।
গান্ধিজি শ্রমিক শ্রেণিকে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে কর্তব্যপরায়ণ হয়ে সংঘবদ্ধ হওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন।
মালিকপক্ষও গান্ধিজির ওপর আস্থা রাখার পন্থা খুঁজে পায়।

উপসংহার – 
শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে। গান্ধিজির পূর্বে ইংরেজী শিক্ষিত কোনো ভারতীয় নেতা কৃষক-শ্রমিক কল্যাণে এগিয়ে আসেননি। তাই গান্ধিজি তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে এসেছিলেন যার ফলে তিনি জনগণের একচ্ছত্র নেতৃত্ব লাভে সক্ষম হন।


১৩. চৌরিচৌরা ঘটনাটির গুরুত্ব কী ছিল ? 
উত্তরঃ-  চৌরিচৌরা ঘটনাটি ( ফেব্রুয়ারি , ১৯২২ খ্রি . ) – র গুরুত্ব হল— প্রথমত , চৌরিচৌরার এই হিংসাত্মক ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী মহাত্মা গান্ধি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন । দ্বিতীয়ত , চৌরিচৌরা ঘটনার পূর্বে মহাত্মা গান্ধির পরিচালিত আন্দোলনে জনগণের যোগদান ক্রমেই হ্রাস পায় ও আন্দোলনকে ধরে রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় । এই পরিস্থিতে ‘ চৌরিচৌরা ঘটনা গান্ধির কাছে আশীর্বাদ রূপে দেখা দেয় এবং চৌরিচৌরা ঘটনার অজুহাতে গান্ধিজী অসহযোগ আন্দোলন থামিয়ে দেন । 


১৪. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন কী ? 
উত্তরঃ-  বড়োলাট লর্ড কার্জন কর্তৃক বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা ( ১৯ জুলাই , ১৯০৫ খ্রি . ) ও তার বাস্তবায়নের ( ১৬ অক্টোবর , ১৯০৫ খ্রি . ) বিরুদ্ধে মূলত বাংলা প্রদেশে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন ( ১৯০৫-১৯১১ খ্রি . ) গড়ে উঠেছিল তা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন নামে পরিচিত । এই আন্দোলনের কয়েকটি দিক হল প্রথমত , এটি প্রথমে নরমপন্থী প্রতিবাদী আন্দোলন হিসেবে শুরু হয় । পরে স্বদেশি , বয়কট ও বৈপ্লবিক পদ্ধতি কার্যকর হয় । দ্বিতীয়ত , এটি ছিল মূলত বাঙালি বুদ্ধিজীবী , জমিদার ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আন্দোলন । তৃতীয়ত , এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামী চরিত্র ধারণ করে । 

১৫. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রতি কৃষক শ্রেণির আগ্রহ ছিল না কেন?
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী তথা স্বদেশী আন্দোলন চলাকালীন ১৯০৫-০৮ খ্রিস্টাব্দে মোতিহারি জেলার কৃষক আন্দোলনকে বাদ দিলে আর কোথাও সেরকম কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়নি। নানা কারণে কৃষক শ্রেণি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিল।

অনীহার কারণ – স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি কৃষক শ্রেণির অনীহার কারণগুলি হল —

কৃষি কর্মসূচীর অভাব – এই আন্দোলনে কোনো কৃষি কর্মসূচী গ্রহণ করা হয় নি। খাজনা হ্রাস, ভূমিস্বত্ব আইন সংরক্ষণ জাতীয় কোনো দাবি স্বদেশী নেতারা করেননি। এইসব কৃষি কর্মসূচীর অভাবেই কৃষক শ্রেণি স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

উচ্চবিত্তদের নেতৃত্ব – এই আন্দোলন শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত নেতৃত্বের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, এই আন্দোলনকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও নেতারা সচেতন-উদাসীনতা দেখিয়েছিলেন।

জোতদার-জমিদার ঘেঁষানীতি – স্বদেশী নেতাদের ধারণা হয়েছিল যে, উচ্চবিত্ত ও জমিদার শ্রেণির সাহায্যপুষ্ট এই আন্দোলনে কৃষি কর্মসূচী সংযোজন করলে জমিদাররা অসন্তুষ্ট হবেন। তাই তাঁরা জোতদার-জমিদার ঘেঁষা নীতিতেই আস্থা রাখেন।

দূরদর্শিতার অভাব – ভারত কৃষি প্রধান দেশ এবং দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশই কৃষক। এই কৃষক শ্রেণি ব্যতীত কোনো আন্দোলনই যে সফল হতে পারে না — এই চিরন্তন সত্যকে স্বদেশীনেতারা উপেক্ষা করে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। অদূরদর্শিতার কারণেই কৃষক শ্রেণিকে এই আন্দোলনে তাঁরা শামিল করতে পারেননি।

কৃষকদের প্রতি উদাসীনতা – আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সচেতনভাবেই কৃষক শ্রেণিকে আন্দোলনে শরিক করে নেওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন।

উপসংহার – উপরিউক্ত কারণে কৃষক শ্রেণি এই আন্দোলনে যোগদান করেননি। ঐতিহাসিক সুমিত সরকার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের অসাফল্য ও অস্থায়িত্বের জন্য এই আন্দোলনের প্রতি কৃষক শ্রেণির অনীহার কথা বলেছেন।

১৬. বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী আন্দোলনে কৃষক শ্রেণি পিছিয়ে ছিল কেন ? 
উত্তরঃ-  বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী আন্দোলনে প্রথমত , কোনো কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি ছিল না । দ্বিতীয়ত , নেতৃবর্গের সঙ্গে জমিদার – মহাজন শোষকদের যোগাযোগের ঘটনাকে কৃষকশ্রেণি সুনজরে দেখেনি । তৃতীয়ত , জমিদার ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির সাহায্যপুষ্ট এই আন্দোলন থেকে কৃষকশ্রেণি যোগদান করার বিষয়ে পিছিয়ে ছিল ।

১৭. কেরালার মালাবার অঞ্চলের মোপলা বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তাল কৃষক আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল কেরালার মালাবার অঞ্চল। মালাবারের মোপলারা ছিল মুসলিম কৃষক সম্প্রদায়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মোপলারা জমিদার শ্রেণির সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে এক সংগঠিত পৃথক আন্দোলন গড়ে তোলে যা মোপলা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

বিদ্রোহের ব্যাপকতা – খিলাফতের প্রভাবে মালাবারের চির-অস্থির মোপালারা খিলাফত শব্দটিকে জমিদার বিরোধী বিদ্রোহের প্রতীক রূপে গ্রহণ করে। মোপলাদের আক্রমণে বহু জমিদার বাড়ী থানা, সরকারী দপ্তর আক্রান্ত হয় এবং এই অঞ্চল থেকে সাময়িকভাবে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ঘটে। মালাবারের বহু স্থানে খিলাফতি সাধারণতন্ত্র স্থাপিত হয়। ইয়াকুব হাসান, আলি মুসলিয়ার ছিলেন উল্লেখযোগ্য নেতা।

বিদ্রোহের চরিত্র – মালাবার অঞ্চলের অধিকাংশ জমিদারই ছিলেন জাতিতে হিন্দু। ফলে হিন্দু জমিদাররা আক্রান্ত হতে থাকে। এর ফলে ক্রমে মোপলা বিদ্রোহ ক্রমান্বয়ে সাম্প্রদায়িক রূপ পরিগ্রহ করে। মোপলা বিদ্রোহ ছিল মূলতঃ কৃষক বিদ্রোহ কিন্তু ধর্মান্ধতার দরুণ তা সাম্প্রদায়িক চরিত্র ধারণ করে। ধর্মান্ধতার কারণে ক্রমে সাধারণ হিন্দুদের ওপরও আঘাত আসে। প্রায় ৬০০ হিন্দু নিহত হয় এবং ২৫০০ হিন্দুকে বলপূর্বক ধর্মান্তকরণ করা হয়। মোপলা নেতা বুন মহম্মদ শত চেষ্টা করেও এই প্রবণতা দূর করতে পারেননি।

ব্যর্থতা – সরকার সামরিক আইন জারি করে মোপলা বিদ্রোহ দমন করে। প্রায় ২৩৩৭ জন মোপলা নিহত হয়।

উপসংহার – খিলাফত ও কংগ্রেসের নেতাদের কাছ থেকেই মোপলা বিদ্রোহের প্রাথমিক প্রেরণা এসেছিল। অবশ্য নেতারা অহিংসপথে আন্দোলনের পক্ষাপাতী ছিলেন। কিন্তু মোপলা বিদ্রোহ পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক রূপ পরিগ্রহ করলে কংগ্রেস ও খিলাফতরা আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

১৮. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ভারতের কোথায় কোথায় কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ভারতে যেখানে যেখানে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয় তা হল— 
( ১ ) গুজরাটের খেদা ও সুরাট জেলায় কৃষকদের খাজনা বন্ধ আন্দোলন , 
( ২ ) পাঞ্জাবের কিষাণসভার আন্দোলন , 
( ৩ ) অন্ধ্রে অরণ্য সত্যাগ্রহ , 
( ৪ ) কৃয়া জেলায় খাজনা বন্ধ আন্দোলন , 
( ৫ ) কেরালায় কিষাণ সত্যাগ্রহ ,
 ( ৬ ) বাংলার কিশোরগঞ্জের কৃষক আন্দোলন । 



১৯. ‘ বখস্ত ‘ আন্দোলন কী ? 
উত্তরঃ-  ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে বিহারে খাজনা অনাদায়ে যে জমি জমিদাররা বাজেয়াপ্ত করত তা বখস্ত জমি নামে পরিচিত । বিহারের এই জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করা হলে যে আন্দোলন সংগঠিত হয় ( ১৯৩০ খ্রি . – ১৯৩৭ খ্রি . ) তা ‘ বখস্ত আন্দোলন ‘ নামে খ্যাত । বামপন্থীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল । 


২০. দামোদর ক্যানেল কর আন্দোলন কী ? 
উত্তরঃ-  ১৯৩০ এর দশকে বাংলায় দামোদর ক্যানেল কর বাড়ানোর কারণে কংগ্রেস নেতা আব্দুল সাত্তার ও কমিউনিস্ট নেতা বঙ্কিম মুখার্জির নেতৃত্বে বর্ধমান জেলায় কৃষকশ্রেণি আন্দোলনে নামে । এই আন্দোলন দামোদর ক্যানেল কর আন্দোলন নামে পরিচিত । 

২১. অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের বিবরণ দাও।
অথবা, অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক শ্রেণির অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – অসহযোগ আন্দোলন শুধু শহুরে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিও এই আন্দোলনে শামিল হয়ে অসহযোগ
আন্দোলনকে গণ আন্দোলনে পরিণত করে।

২২. আইন অমান্য আন্দোলন ‘ বলতে কী বোঝ ? 
উত্তরঃ-  মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল লবণ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে ভারতে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তা আইন অমান্য আন্দোলন ( ১৯৩০-৩৪ খ্রি . ) নামে পরিচিত । এই আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— প্রথমত , এটি দুটি পর্যায়ে পরিচালিত হয়েছিল এবং গান্ধি ডারউইন চুক্তির মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের অবসান ঘটেছিল । দ্বিতীয়ত , এই আন্দোলনে কৃষকদের যোগদান খুব উল্লেখযোগ্য হলেও শ্রমিকদের যোগদান আশানুরূপ ছিল না । তৃতীয়ত , এই আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল । 

বাংলা কৃষকদের ভূমিকা – বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। এর মধ্যে মেদিনীপুর জেলা ছিল অন্যতম। কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে মেদিনীপুরের কৃষকরা সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এক ইউনিয়ন বোর্ড বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। সরকার দমন পীড়ন চালিয়েও কৃষক ঐক্যকে ভাঙ্গতে পারে নি। বাংলার পাবনা, বগুড়া, বীরভূমের রামপুরহাটে সরকারী জমি-জরিপের কাজ বয়কট করা হয়। কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর এবং দিনাজপুরের মুসলিম কৃষকরাও অসহযোগ আন্দোলনে শামিল হয়। দিকু শোষণের বিরুদ্ধে বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের আদিবাসীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়।

অযোধ্যা – দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব অযোধ্যায় বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলনের সংগঠিত হয় (১৯২০ খ্রিস্টাব্দ)। ক্রমে তা রায়বেরিলি, প্রতাপগড়, ফৈজাবাদ ও সুলতান পুরে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর অযোধ্যায় ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে মাদারি পাশির নেতৃত্বে একা আন্দোলনেও অসহযোগ সত্যাগ্রহের প্রতি সমর্থন উচ্চারিত হয়েছিল।

অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন – অন্ধ্রপ্রদেশের রায়চোটি তালুক (কুড়াপ্পা) ও পালান্ড তালুকে (গুন্টুর রেখা) যে সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়, তাতেও খাজনা হ্রাস ও অরণ্য আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকরা আন্দোলনে সমবেত হয়।

বিহারে কৃষক আন্দোলন – বিহারে জমিদারদের জুলুম ও বাড়তি খানার বিরুদ্ধে কৃষকরা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। দ্বারভাঙ্গা, ভাগলপুর, মজঃফরপুর, পুর্নিয়া, মুঙ্গের প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

কেরালার মালাবার অঞ্চল – অসহযোগ আন্দোলনের সময় খিলাফৎ ও কংগ্রেসী নেতাদের কাছে অনুপ্রেরণা পেয়ে মালাবারের মোপলা কৃষকরা কৃষক আন্দোলনের জিগির তোলেন।

উপসংহার – অসহযোগ আন্দোলনের সময় বেশ কিছু কৃষক আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং এগুলির সঙ্গে গান্ধিবাদী জাতীয় আন্দোলনের যোগসূত্র ছিল না।

২৩. ‘ পত্তনিদার ’ ও ‘ কুনবি ’ কাদের বলা হয় ? 
উত্তরঃ-  গুজরাটের মধ্যবিত্ত চাষিদের বলা হত ‘ পত্তনিদার । সেখানকার নিম্নবর্গীয় দরিদ্র কৃষকদের ‘ কুনবি ‘ বলা হত । ২০ বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয় ? ( মাধ্যমিক , ২০১৮ ) গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি অঞ্চলে সরকার ৩০ শতাংশ ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করে । এর প্রতিবাদে এখানকার হিন্দু – মুসলমান কৃষকেরা প্রথমে স্থানীয় নেতৃত্বে ও পরে গান্ধিবাদী নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে খাজনা হ্রাসের দাবিতে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে , তা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত । আন্দোলনের চাপে সরকার খাজনা হ্রাস ( ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিবর্তে ৬.০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায় ) করতে বাধ্য হয়েছিল । 

২৪. একা আন্দোলন (১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দ) – টীকা লেখো।\
অথবা , একা আন্দোলন সম্পর্কে যা জানো লিখ। 
উত্তরঃ-  
১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের উদ্যোগে এবং মাদারি পাশির নেতৃত্বে হরদৌই, সীতাপুর, বারাচ, বারবাঁকী জেলায় যে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়, তা একা বা একতা আন্দোলন নামে পরিচিত।

নামকরণ – এই আন্দোলন একা আন্দোলন নামে পরিচিত — কারণ আন্দোলনকারীরা ঐক্যবদ্ধ (একতা) থাকার জন্য প্রতিজ্ঞাগ্রহণ করে। তবে ধর্মীয় ভাবাবেগও তাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছিল।

একা আন্দোলনের কর্মসূচী/শপথ পাঠ – কৃষকরা মাটিতে গর্ত করে জল রেখে তাতে গঙ্গাজল বলে মনে করত এবং সেই জল ছুঁয়ে তারা নিম্নে বর্ণিত শপথ গ্রহণ করত।

জমি বেদখল হলে তারা জমি ছাড়বে না
রেকর্ডভুক্ত নির্দিষ্ট খাজনা ছাড়া অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হবে না
রসিদ ছাড়া খাজনা দেওয়া হবে না
বাটাই বা শস্যের ভাগ দ্বারা খাজনা না দিলে টাকায় খাজনা দেওয়া হবে
বেগার প্রথা বন্ধ করা হবে
গ্রামে সংঘটিত বিবাদ, পঞ্চায়েতে মীমাংসা করা হবে
যে কোনো পরিস্থিতিতে কৃষকদের মধ্যে একতা রক্ষা করতে হবে।
জাতীয় কংগ্রেস ও একা আন্দোলন – প্রাথমিক পর্যায়ে কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরবর্তীতে একা আন্দোলন কংগ্রেস নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে। পথে চলা শুরু করে। মাদারি পাশি ও অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির কিষাণ নেতা এই আন্দোলনকে তাঁদের নিজস্ব পথে পরিচালিত করেন। ফলে কংগ্রেস এই আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

একা আন্দোলনে হিংসার প্রকাশ – একা আন্দোলন ক্রমে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। কুমায়ুন অঞ্চলের সংরক্ষিত অরণ্য জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। জমিদার ও তালুকদারদের গৃহ আক্রান্ত হয়। ফলে সরকার দমননীতি প্রয়োগ করে একা আন্দোলন দমন করে।

উপসংহার – পরিশেষে বলা যায় যে, কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের উদ্যোগেই একা কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয় এবং মাদারি পার্শির নেতৃত্বে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নেয়। এই আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত কৃষক বিদ্রোহ।

২৫. বারদৌপি সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ করেছিলেন এমন মহিলাদের নাম লেখো । 
উত্তরঃ-  বারদৌলি সত্যাগ্রহে স্থানীয় মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায় । মিঠুবেন প্যাটেল , মনিবেন প্যাটেল , ভক্তি বাই , শারদা মেহতা প্রমুখ ছিলেন বারগৌলি সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য মহিলা নেত্রী । 

২৬. বারমৌলি সত্যাগ্রহের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো । 
উত্তরঃ-  বারমৌলি সত্যাগ্রহের দুটি বৈশিষ্ট্য হল প্রথমত , এটি ছিল বর্ণব্যবস্থা ও সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে স্থানীয় নেতৃত্বে এবং হিন্দু ও মুসলিম ও নারীদের যোগদানে গড়ে তোলা একটি কৃষক আন্দোলন । দ্বিতীয়ত , এই আন্দোলন ছিল গান্ধিপন্থী কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের সুচিন্তিত ও কৌশলী নেতৃত্ব এবং সফলভাবে পরিচালিত একটি সত্যাগ্রহ আন্দোলন । 

আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা কীরূপ ছিল?
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক শ্রেণি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আইন অমান্য আন্দোলনে বিশেষ স্থান ও সময় ছাড়া শ্রমিকরা এই আন্দোলনে উৎসাহ দেখায়নি।

শ্রমিক বিমুখতার কারণ – আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের যোগ না দেওয়ার কারণগুলি হল —

আইন অমান্য আন্দোলনের প্রাক্কালে কমিউনিস্ট পরিচালিত গিরনী কামগর শ্রমিকদের ধর্মঘটসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিক ধর্মঘটে বিফলতা জনিত হতাশা
ছাঁটাইয়ের ফলে শ্রমিকরা শক্তিহীন হয়ে পড়ে
আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে কোনো সবুজ সংকেত না দেওয়া।
শ্রমিকদের ভূমিকা – আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের যোগদানের বিভিন্ন দিকগুলি হল —

কমিউনিস্ট পার্টির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শ্রমিকরা সম্পূর্ণরূপে উদাসীন থাকতে পারেননি। মহারাষ্ট্রের শোলাপুরে শ্রমিক হাঙ্গামা প্রমাণ করে যে, শ্রমিকরা পূর্ণস্বরাজের দাবীর মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছে। আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বোম্বাই বন্দরে শ্রমিক আন্দোলনের ফলে প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি পণ্য বাজারে আটকে পড়ে। বোম্বাই-এ ব্রিটিশ পরিচালিত অনেক সুতাকল বন্ধ হয়ে যায়। আইন অমান্য আন্দোলন শুরুর দিন অর্থাৎ ৬ এপ্রিল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই-এ জি. আই. পি. রেলওয়ে মেনস্ ইউনিয়নের শ্রমিকরা সত্যাগ্রহ শুরু করে। এই সময়ে করাচির বন্দর শ্রমিকরা, কলকাতার পরিবহন ও কারখানার শ্রমিকরা এবং মাদ্রাজের শিল্পশ্রমিকরা ব্রিটিশ বিরোধী ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিলেন।

উপসংহার – পরিশেষে বলা যায় যে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভারতের সর্বত্র শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত না হলেও কোথাও কোথাও শ্রমিকরা আইন অমান্য আন্দোলনের পূর্ণস্বরাজের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে কমিউনিস্টরা জাতীয় আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

২৭. স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতের কোথায় কোথায় শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয় ? 
উত্তরঃ-  স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয় । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল 
( ১ ) বাংলায় কলকারখানায় ধর্মঘট , 
( ২ ) তামিলনাড়ুতে সরকারি কারখানায় ধর্মঘট , 
( ৩ ) জামালপুর রেল কারখানায় ধর্মঘট । 

২৮. শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলনকে দিকচিহ্ন বলা হয় কেন ? 
উত্তরঃ-  শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলনকে দিকচিহ্ন বলা হয় , কারণ প্রথমত , ১৯০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী বা স্বদেশি আন্দোলনকালে বাংলার কলকারখানার ধর্মঘট , তামিলনাড়ুতে সরকারি কারখানার ধর্মঘট , জামালপুর রেল কারখানার ধর্মঘটের মাধ্যমে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ ছিল শ্রমিক আন্দোলনের প্রকৃত সূচনাকাল । দ্বিতীয়ত , অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণি বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী জাতীয় আন্দোলনে শামিল হয় এবং এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই শ্রমিকদের মধ্যে জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটে । তৃতীয়ত , ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র স্বদেশি আন্দোলনকে শ্রমিক আন্দোলনের দিক্‌চিহ্ন বলেছেন । 

সর্বভারতীয় কিষাণ সভা (১৯৩৬ খ্রি:) – টীকা লেখো।
বিশ শতকের ত্রিশের দশকে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল ও কমিউনিস্ট দল কিষাণ আন্দোলনগুলি পরিচালনা করে। সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্টদের যৌথ প্রচেষ্টায় ফলশ্রুতি হল সর্বভারতীয় বা নিখিল ভারত কিষাণ সভা গঠন।

সর্বভারতীয় কিষাণ সভা গঠন – অধ্যাপক এন. জি. রঙ্গের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কিষাণ সংগঠনের (১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) লখনউ অধিবেশনে সর্বভারতীয় কিষাণসভা গঠিত হয়। বিহারের বিখ্যাত কিষাণনেতা স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী ছিলেন সর্বভারতীয় কিষাণ সভার প্রথম সভাপতি এবং এন. জি. রঙ্গ ছিলেন প্রথম সাধারণ সম্পাদক। জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক, নাম্বুদ্রিপাদ এই কিষাণ সভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সর্ব ভারতীয় কিষাণ সভা গঠনের উদ্দেশ্যে – ইন্দুলাল যাজ্ঞিক কিষাণ বুলেটিনে এই সভার উদ্দেশ্য ঘোষণা করেন। এই সভার উদ্দেশ্যগুলি হল —

কৃষকদের অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক অসাম্য দূর করা
জমিদারী প্রথার বিলোপ
কৃষিঋণ মুকুব বা কৃষকের গৃহীত ঋণ পরিশোধের জন্য বিলম্বিত ব্যবস্থা
বেগার শ্রমের বিলোপ
ভূমিহীনদের ভূমিদান
কৃষকের জমিতে স্থায়ী স্বত্ব প্রদান
অরণ্যের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
গুরুত্ব – সর্বভারতীয় কিষাণ সভা গঠনের মধ্য দিয়ে কৃষক শ্রেণি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ শুরু করে। দেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারতীয় জনগণের বৃহত্তম অংশ শামিল হওয়ার সুযোগ পায়। রুশ ঐতিহাসিক জি. কটোভস্কির মতে, ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে সর্বভারতীয় কিষাণ সভার প্রতিষ্ঠা একটি স্মরণীয় ঘটনা।

উপসংহার – সর্বভারতীয় কিষাণ সভা গঠনের ফলে কিষাণ আন্দোলনে নবপ্রাণের সঞ্চার ঘটে।

২৯. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী ? 
উত্তরঃ-  ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিউনিস্ট তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার জন নিরাপত্তা আইনে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২০ মার্চ প্রথমে ৩১ জন কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতা ও সংগঠককে গ্রেপ্তার করে এবং পরে এইচ এল হ্যাচিনসনকে গ্রেপ্তার করে । এভাবে মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে যে মামলা রুজু করা হয় — তা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত । এই মামলা চার বছর ধরে চলেছিল । 

৩০. শ্রমিক শ্রেণি স্বদেশি আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল কেন ? 
উত্তরঃ-  শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দাবিসমূহের যথার্থতা সম্পর্কে জাতীয়তাবাদী নেতারা মান্যতা দেওয়ায় জাতীয় আন্দোলনের প্রতি শ্রমিক শ্রেণির আস্থা বাড়ে । তাই শ্রমিক শ্রেণি হরতাল , শিল্প ধর্মঘট দ্বারা স্বদেশি আন্দোলনে সমর্থন জানায় । 

৩১. নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস ‘ কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ? 
উত্তরঃ-  নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল প্রথমত , সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরোধিতা করা , অর্থাৎ রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করা । দ্বিতীয়ত , বিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকা শ্রমিক আন্দোলনগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে শ্রমিক স্বার্থকে সুরক্ষিত করা ও শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করা । তৃতীয়ত , জাতীয় রাজনীতিতে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ করে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে জোরদার করা । 

৩২. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো । 
উত্তরঃ-  মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩১ জন কমিউনিস্ট নেতা ও কর্মীকে এবং পরে এল . হ্যাচিনসনকে গ্রেপ্তার করা হয় । এঁদের মধ্যে অভিযুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কমিউনিস্ট নেতা হলেন— মুজাফ্ফর আহমেদ , এস ভি ঘাটে ( সহ সম্পাদক , ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস , ১৯২৭ খ্রি . ) , কে এন যোগলেকর ( জি জে পি রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ) , এস এ ডাঙ্গে ( গিরনি কামগার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ) , শৌকত উসমানি ( বোম্বাইয়ের উর্দু – শ্রমজীবী পত্রিকার সম্পাদক ) , পি সি যোশী ( সংযুক্ত প্রদেশের ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির সহ সম্পাদক ) , ধরণী গোস্বামী , সামসুল হুদা , গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ । 

৩৩. বাংলায় শ্রমিক – কৃষক দলের উদ্যোক্তা কারা ? 
উত্তরঃ-  মুজাফ্ফর আহমেদ বাংলায় ‘ শ্রমিক কৃষক দল ‘ গঠন করেন । তাঁর সঙ্গে ছিলেন কবি নজরুল ইসলাম , কুতুবউদ্দিন আহামেদ ও হেমন্তকুমার সরকার । 

৩৪. দত্ত – ব্রাডলে থিসিস কী ? 
উত্তরঃ-  ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টিসহ বেশ কয়েকটি বামপন্থী দল ও ট্রেড ইউনিয়নকে নিষিদ্ধ করা হলে রজনীপাম দত্ত ও বেন ব্রাডলে নামক দু’জন কমিউনিস্ট নেতা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি ইস্তেহার প্রকাশ করেন এবং ‘ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুক্ত ফ্রন্ট ’ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন । এটি ‘ দত্ত – ব্রাডলে থিসিস ‘ নামে পরিচিত । এই থিসিস অনুযায়ী পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সাম্রাজ্য বিরোধী সংগ্রাম ও বৃহত্তর যুক্তফ্রন্ট গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয় । 

৩৫. কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধির নিদর্শন হিসেবে ত্রিপুরী কংগ্রেসের অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তরঃ-   
ভূমিকা – কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে (১৯৩৯ খ্রি:) বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ চরমে ওঠে। এই অধিবেশনে বামপন্থীরা কোণঠাসা হয় এবং দক্ষিণ পন্থীদের একাধিপত্য বজায় থাকে।

প্রেক্ষাপট – গান্ধিজি ছিলেন কংগ্রেসের অবিংসবাদী নেতা নেহরুর কথায়, তাঁর (গান্ধিজি) কৃপাধন্য থেকে বঞ্চিত হওয়া মানে রাজনৈতিক অপমৃত্যু। কিন্তু সেই গান্ধীজির আপত্তি সত্ত্বেও ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয়বারের জন্য কংগ্রেস সভাপতি পদে প্রার্থী হন। সভাপতি পদের নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র গান্ধীজি মনোনীত দলীয় দক্ষিণপন্থী প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে ২০৩টি ভোটের (১৫৮০-১৩৭৭) ব্যবধানে পরাজিত করেন।

প্রতিক্রিয়া – সুভাষচন্দ্র বসুর জয়লাভে গান্ধিজি কড়া প্রতিক্রিয়া গান্ধিজি ব্যক্ত করেন। ফলতঃ কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতারা সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা এবং তাঁর প্রতি অসহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে। গান্ধিজিও সভাপতি হিসেবে সুভাষচন্দ্রের ক্ষমতা কাটছাঁট শুরু করলেন। এইরূপ পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে (২৯ এপ্রিল, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ) সভাপতি পদে ইস্তফা দেন। অতঃপর ৩মে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি নতুন বামপন্থী দল গঠন করেন।

গুরুত্ব –

কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশন বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন — কংগ্রেস ভাঙ্গনের মুখে পড়ে
ত্রিপুরী অধিবেশনের পর থেকে কংগ্রেসি রাজনীতিতে গান্ধীজির একাধিকপত্য প্রতিষ্ঠিত ও সুদৃঢ় হয়,
কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শক্তিগুলিকে সুসংহত করার আশা বিলীন হয়।

৩৬. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতাদের নাম লেখো । 
উত্তরঃ-  মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গে দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতাও অভিযুক্ত হন । এঁরা হলেন বেন ব্রাডলি ও ফিলিপ স্প্লাট । এ ছাড়াও হিউ লেস্টার হ্যাচিনসন নামে একজন ব্রিটিশ সাংবাদিকও এই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন । 

৩৭. বিশ শতকের ৪০-এর দশকে সংগঠিত বাংলার তেভাগা আন্দোলনের বিবরণ দাও।
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষাণসভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়।

তেভাগার দাবীসমূহ – কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষাণসভা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেভাগা আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। তেভাগার দাবীসমূহগুলি হল —

উৎপন্ন ফসলের ২/৩ ভাগ কৃষকের প্রাপ্য মালিক পাবে ১/৩ অংশ।
জমিতে ভাগচাষীকে দখলিস্বত্ব দিতে হবে
১২(১/২) শতাংশ এর বেশি সুদ মহাজন বা জমিদাররা দাবী করতেপারবে না
কোনো কাজে কর (আবওয়াব) আদায় দি করা যাবে না
ফসলের ভাগ নিয়ে রসিদ দিতে হবে
ভাগচাষীর খামারে ধান তুলতে হবে
আধি নয়, তেভাগা চাই, কর্জ ধানের সুদ নাই
১ মনে ৫ সের – এর বেশি সুদ নেওয়া যাবে না।

বিস্তৃতি – তেভাগা আন্দোলন বাংলার প্রায় সব জেলায় শুরু হয়েছিল, দিনাজপুর, ময়মনসিং, কাকদ্বীপ, রংপুর, বগুড়া, জলপাইগুড়ি যশোর ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। খুলনা জেলায় স্লোগান ওঠে, লাঙল যার, জমি তার। দিনাজপুরের আদিবাসী কৃষকরা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই বিদ্রোহের চরিত্রগত স্বাতন্ত্র্য উল্লেখ করে ঐতিহাসক ধনাগারে লিখেছেন, It was the first consciously attempted revolt by a politicsed Peasantry in Indian History.

নেতৃবৃন্দ – তেভাগা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য নেতা, নেত্রীরা হলেন — গুরুদাস তালুকদার, ভবানী সেন, অবনী রায়, ভবানী সেন, চারু মজুমদার, সমর গাঙ্গুলী, সুশীল সেন, জলপাইগুড়ির রাজবংশী বৃদ্ধা মহিলা বুড়িমা প্রমুখ।

উপসংহার – সরকারের কঠোর দমননীতি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, সার্বিক ঐক্যের অভাব ইত্যাদি কারণে আন্দোলন। ব্যর্থ হলেও পরবর্তীকালে বর্গাদার আইন, বাংলা ভূমিস্বত্ব আইন, জমিদারী উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তেভাগা আন্দোলনের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।

৩৮. স্বদেশি আন্দোলনের যুগে কয়েকজন নেতার নাম লেখো , যাঁরা শ্রমিক সংগঠনে এগিয়ে এসেছিলেন ? 
উত্তরঃ-  স্বদেশি আন্দোলনের যুগে কয়েকজন শ্রমিক নেতা হলেন — প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী , অপূর্ব কুমার ঘোষ , অশ্বিনীকুমার ব্যানার্জি ও প্রেমতোষ বসু । এঁরা সকলেই ব্যারিস্টার ছিলেন । 

৩৯. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়া কী ছিল ? 
উত্তরঃ-  মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়া ছিল এরকম প্রথমত , এই ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত ৩২ জনের প্রত্যেকেই কমিউনিস্ট ছিলেন না , ঘটনাচক্রে আটজন ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য । তাই জাতীয় কংগ্রেসসহ রাজনৈতিক দলগুলি ব্রিটিশ সরকারের এই কমিউনিস্ট দমন প্রচেষ্টাকে ভারতজুড়ে তীব্র ধিক্কার জানায় । দ্বিতীয়ত , ভারতে কমিউনিস্ট প্রভাব দূর করতে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হলেও তা পরোক্ষভাবে কমিউনিস্ট প্রভাব বৃদ্ধি করে , কারণ এই মামলার বিচারকালে আত্মপক্ষ সমর্থনের মাধ্যমে কমিউনিস্টরা কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রচার করেছিল ।

৪০. পুন্নাপ্রা-ভায়লার গণসংগ্রাম (১৯৪৬ খ্রি:) – টীকা লেখো।
অথবা, পুন্নাপ্রা-ভায়লার গণসংগ্রাম (১৯৪৬ খ্রি:)  সম্পর্কে যা জান লিখ। 
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের পুন্নাপ্রা-ভায়লার অঞ্চলের কৃষক ও শ্রমিকরা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তীব্র আন্দোলন শুরু করে যা পুন্নাপ্রাভায়লার গণসংগ্রাম নামে পরিচিত।

আন্দোলনের কারণ – রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেই ত্রিবাঙ্কুরের হত দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকরা গণসংগ্রামে শামিল হয়েছিল। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর খাদ্যাভাব ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং রাজার স্বৈরাচারী শাসন ও শোষণে কৃষক ও শ্রমিকদের দুর্দশা চরমে ওঠে। অপরদিকে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের দেওয়ান কর্তৃক ত্রিবাঙ্কুরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত না করে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে রাখার বাসনা–সেখানকার জনগণকে খেপিয়ে তুলেছিল। জনগণ চেয়েছিল স্বাধীন ভারতের নাগরিক হতে। অথচ দেওয়ান সি. পি. রামস্বামী আয়ার এই রাজ্যটি কে স্বাধীন রাখার জন্য মার্কিন ধাঁচে এক সংবিধান রচনা করেন।

আন্দোলনের নেতৃত্ববর্গ – বামপন্থী নেতা কে. সি. জর্জ ও টি. ভি. টমাস পুন্নাপ্রা-ভায়লার গণ সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁদের নেতৃত্বে স্লোগান ওঠে – দেওয়ানের শাসন খতম করো ; স্বাধীন ত্রিবাঙ্কুর ও মার্কিন মডেল আরব সাগরে ছুঁড়ে ফেলে দাও।

পুন্নাপ্রার যুদ্ধ – কমিউনিস্টরা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন মডেলের সংবিধানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার শুরু করেন। তীব্র কমিউনিস্ট বিরোধী ত্রিবাঙ্কুর সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরাপাকড় শুরু করে। কমিউনিস্ট নেতৃত্বে কৃষকরা আত্মরক্ষার তাগিদে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নিয়ে প্রতিরোধ শুরু করেন। আলেপ্পে শেরতেলিতে একটি সাধারণ রাজনৈতিক ধর্মঘট শুরু হয়। পুন্নাপ্পা পুলিশ ফাঁড়ি অক্রান্ত হয়, পুলিশি অত্যাচারও চরমে ওঠে।

ভায়লারের যুদ্ধ – আলেপ্পে শেরতেলিতে রাজনৈতিক ধর্মঘটের কারণে — সমগ্র রাজ্যে সামরিক আইন জারি করা হয়। ২৭ অক্টোবর সেনাবাহিনি প্রায় ৮০০ কমিউনিস্টকে নিধন করে তাদের সদর দপ্তর ভায়লার দখল করে।

ত্রিবাঙ্কুরের ভারত চুক্তি – ত্রিবাঙ্কুরের দেওয়ান গান্ধিজিকে জানান যে, ত্রিবাঙ্কুর স্বাধীন থাকবে। গান্ধি বিরক্ত হয়ে বলে, কোনো রাজা যদি বলে যে চিরদিন স্বাধীন ছিল ও ভবিষ্যতে থাকবে তবে সেটা অত্যন্ত ভুল হবে, অশোভন হবে। এই সময় এক অজ্ঞাত আততায়ীর দ্বারা ছুরিকাহত হয়ে দেওয়ান রামস্বামী আয়ার ত্রিবাঙ্কুরের ভারতভুক্তিতে সেই করেন।

উপসংহার – তাই কমিউনিস্টদের কাছে বীর শহীদদের গৌরবময় আত্মবলিদানের আজ এক নাম পুন্নাপ্রা – ভায়লার।

৪১. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত কেন বিখ্যাত ? 
উত্তরঃ-  ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ( ১৮৮০-১৯৬১ খ্রি . ) বিখ্যাত ছিলেন , কারণ প্রথমত , তিনি ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের ভাই এবং স্বামী বিবেকানন্দের শূদ্র জাগরণ তত্ত্ব ’ ও ‘ মার্কসবাদ – লেনিনবাদ ’ – এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন । দ্বিতীয়ত , কমিউনিস্ট নেতা বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি ‘ ইন্ডিয়ান প্রোলেটারিয়ান রেভেলিউশনারি পার্টি ‘ গঠন করেন এবং এই দলের মুখপত্র ‘ গণনায়ক ’ পত্রিকার মাধ্যমে ভাবাদর্শ প্রচারের পাশাপাশি তরুণ বিপ্লবীদের এই সংগঠনে যুক্ত করেন । তৃতীয়ত , তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই দল পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মিশে যায় । 

৪২. তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ওপর একটি টীকা লেখো।
অথবা, তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে যা জানো লিখ। 
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – স্বাধীনতার প্রাক্কালে হায়দরাবাদ রাজ্যের তেলেঙ্গানায়, কমিউনিস্ট পরিচালিত সশস্ত্র কৃষক আন্দোলন তেলেঙ্গানা আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলেছিল।

অঞ্চলগুলির পরিচয় – ভারতের মানচিত্রের পূর্বদিকে ৯টি তেলেগু ভাষাভাষি জেলা নিয়ে এই তেলেঙ্গানা অঞ্চল গড়ে উঠেছে। এই জেলাগুলি হল — ওয়ারাঙ্গাল, নালগোল্ডা, মেহবুবনগর, হায়দরাবাদ, আদিলাবাদ, করিমনগর ও নিজামাবাদ প্রভৃতি। ইংরেজ আমলে নিজাম শাসিত এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

আন্দোলনের কারণ –

নিজামের অত্যাচার – নিজাম শাসিত হায়দরাবাদ রাজ্যটি ছিল স্বৈরাশাসনের কেন্দ্র, নিজাম-এর শাসন ছিল মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের অনুরূপ।
জমিদারদের কর – কৃষকদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো খাজনা আদায় করা হত। এছাড়া হরিজনদের কাছ থেকে ভেট্টি নামক বাধ্যতামূলক শ্রমকর আদায় করা হত। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে জমিদারদের বাড়তি কর দিতে হত।
আন্দোলনের বিস্তৃতি – ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জুলাই লালগোন্ডায় প্রথম বিদ্রোহ শুরু হলে ধীরে ধীরে তা ওয়ারাঙ্গল, খাম্বাস ও অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। কমিউনিস্ট পরিচালিত এই দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র আন্দোলনে তিন হাজার গ্রামের প্রায় ৩০ লক্ষ দরিদ্র কৃষক অংশ নিয়েছিল। পি সি. সুন্দরাইয়া, রবিনারায়ণ রেড্ডি, ইয়েলো রেড্ডি প্রমুখরা ছিলেন তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

গুরুত্ব – তেলেঙ্গানা আন্দোলন ছিল প্রথম সশস্ত্র কৃষক আন্দোলন — যা কৃষকদের সংগ্রামশীল চরিত্রের এক বড়ো দৃষ্টান্ত। অধ্যাপক সুনীল সেনের ভাষায় তেলেঙ্গানা আন্দোলনের বিজয় স্বীকার্য। নিজামের শাসকের অবসান হল। পুরোনো স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস হল। হায়দরাবাদ ভারত ইউনিয়নে যোগ দিল।

৪৩. ভারত ছাড়ো ‘ আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী ছিল ? 
উত্তরঃ-  ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়া নাৎসি জার্মানির দ্বারা আক্রান্ত হলে ভারতীয় কমিউনিস্ট দল সোভিয়েত রাশিয়ার মিত্র ব্রিটেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানায় । ভারতছাড়ো আন্দোলন দ্বারা যুদ্ধরত ব্রিটেনকে বিব্রত করা উচিত হবে না বলে তারা মনে করে । ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে তারা ব্রিটেনের যুদ্ধকেই ‘ জনযুদ্ধ ’ বলে অভিহিত করে এবং নীতিগত কারণেই ভারতীয় কমিউনিস্ট দল ভারতছাড়ো আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে । 

৪৪. সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস – টীকা লেখো।
অথবা, সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস সম্পর্কে যা জান লিখ। 
উত্তরঃ-   
ভূমিকা – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে শ্রমিকদের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী সারা ভারতশ্রমিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC)।

পটভূমি – ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের অমৃতসর অধিবেশনে প্রথম শ্রমিকদের প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয় এবং প্রতিটি প্রাদেশিক সংগঠনকে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। নাগপুর অধিবেশনে (১৯২০ খ্রি:) ও গয়া অধিবেশনে শ্রমিক আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে পরিচালনার জন্য গঠিত হয় একটি বিশেষ কমিটি।

সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ৩০ অক্টোবর মাদ্রাজে সারা ভারত শ্রমিক সম্মেলনে ১৮টি শ্রমিক। ইউনিয়নের ৮০৬ জন প্রতিনিধি যোগদান করে। এর ফলশ্রুতি হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত হয় শ্রমিকদের জন্য নিজস্ব সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন (AITUC) সংগঠন। লালা লাজপত রায় এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং সম্পাদক ছিলেন দেওয়ান চমনলাল। জোসেফ ব্যপ্তিস্তা ছিলেন সহসভাপতি।

কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি – জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের মধ্যে লালা লাজপত রায়, চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ নেতৃবর্গ সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতেন। লাজপত রায় তাঁর ভাষণে সাম্রাজ্যবাদের অশুভ পরিণাম সম্পর্কে মালিকপক্ষকে সতর্ক করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সংগঠনটিকে কংগ্রেসের কাছাকাছি রাখতে তিনি ইচ্ছুক ছিলেন।

দ্বিতীয় অধিবেশন – AITUC-র দ্বিতীয় অধিবেশনে দেওয়ান চমনলাল স্বরাজ সম্পর্কিত প্রস্তাব উপস্থাপন করার সময় মন্তব্য করেন যে, এই স্বরাজ পুঁজিপতিদের জন্য নয় ; তা শ্রমিকদের মঙ্গলের জন্যই অর্জন করতে হবে (It was to be a swaraj not for the capitalist, but for the wokers.)।

উপসংহার – মহাত্মাগান্ধি শ্রমিক সংগঠনের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখান নি। তিনি অর্থনৈতিক কারণে পুঁজিপতিদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলারই পক্ষপাতী ছিলেন। কাজেই শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের এই জটিল দৃষ্টিভঙ্গীর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক শ্রেণিও কখনো কখনো জাতীয় আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল। তবুও একথা অনস্বীকার্য যে, সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

৪৫. কিষাণ আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধির কারণ কী ? 
উত্তরঃ-  কিষাণ আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল— 
(১ ) কিষাণ আন্দোলনের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের উদাসীনতা ; 
( ২ ) রুশ বিপ্লবে শ্রমিক – কৃষকদের সাফল্য ; 
( ৩ ) কংগ্রেসের আপসমূলক নীতি ; 
( ৪ ) অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমিদার জোতদার – ঘেঁষা নীতি ; 
( ৫ ) উপযুক্ত কৃষক – কর্মসূচি গ্রহণে অনীহা । প্রশ্ন ৬৪ সর্বভারতীয় কিষাণসভা গঠনে ( ১৯৩৬ খ্রি . ) কাদের নাম জড়িয়ে গেছে ? উত্তর ) এন জি রঙ্গ , স্বামী সহজানন্দ , ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ , ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখ কিষাণ নেতার নাম সর্বভারতীয় কিষাণ সভা গঠনে জড়িয়ে আছে । 

৪৬. ওয়ার্কার্স এ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি – টীকা লেখো।
অথবা, ওয়ার্কার্স এ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে যা জানো লিখ। 

৪৭. উত্তরঃ-  অসহযোগ আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। এইরূপ পরিস্থিতিতে ভারতে গণকমিউনিস্ট শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে — ওয়ার্কার্স এ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি।

ওয়ার্কার্স এ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি গঠন – শ্রমিক-কৃষকদের লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে দি লেবার পেজেন্টস্ স্বরাজ পার্টি অব দ্য ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে এই পার্টির নাম পরিবর্তন করে মুজাফ্ফর আহমেদ, কবি নজরুল ইসলাম, এস. এ. ডাঙ্গে, কুতুবউদ্দিন আহমেদ এবং হেমন্ত কুমার সরকারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে পেজেন্টস্ এ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় এর নাম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ওয়াকার্স এ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি (Workers and Peasants Party) আত্মপ্রকাশ করে।

উদ্দেশ্য – ওয়াকার্স এ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টির উদ্দেশ্যগুলি হল —

শ্রমিকদের কাজের সময় সীমা নির্ধারণ
বাক্ স্বাধীনতা অর্জন
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অর্জন
জমিদারী প্রথার বিলোপ সাধন এবং
সর্বনিম্ন মজুরি আইন প্রবর্তন ইত্যাদি।
এই সংগঠনটি তার উদ্দেশ্য পুরণের লক্ষ্যে যে আন্দোলনগুলি চালিয়েছিল, জাতীয় কংগ্রেসও সেইসব আন্দোলনের প্রতি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সহানুভূতি দেখিয়েছিল। কলকাতার ধাঁচে পরবর্তীকালে পাঞ্জাব ও বোম্বাই সমেত আরো অন্যান্য অঞ্চলে এইরূপ সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। তবে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে সংগঠনটি সফলতা পেলেও কৃষকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সাফল্য ছিল ক্ষীণ।

৪৮. ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ-  
ভূমিকা – ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কানপুরে মুজাফ্ফর আহমেদ-এর নেতৃত্বে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় — যা শ্রমিক কৃষক আন্দোলনে একটি নতুন ধারা সংযোজন করে।

প্রেক্ষাপট – মানবেন্দ্র রায়ের উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের কলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ, লাহোর প্রভৃতি শহরে স্থানীয় সাম্যবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। বোম্বাই-এ. এস. এ. ডাঙ্গে, কলকাতায় মুজাফ্ফর আহমেদ, লাহোরে গুলাম হোসেন, মাদ্রাজে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার প্রমুখের নেতৃত্বে একাধিক কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এস. বি. ঘাটে ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট দলের প্রথম সাধারণ সম্পাদক।

জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ – এম. এন. রায় অত্যন্ত চতুরভাবে দলের দুটি ভাবমূর্তি গঠন করেন। একটি হল জাতীয় আন্দোলনের মূলস্রোতে যোগদান দ্বারা আইনগত ও বৈধভাবে আন্দোলন করা। অপরটি হল – গোপনে শ্রমিক-কৃষক সংগঠন দ্বারা দলের নিজস্ব ভিত্তি শক্ত করা।

মূল্যায়ণ – তবে নানা পরিস্থিতির চাপে বাধ্য-বাধকতার কারণে কমিউনিস্টরা জাতীয় আন্দোলন থেকে বিশেষত ভারতছাড়ো আন্দোলনে নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখেছিল। তবে শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে কমিউনিস্ট আদর্শ বেশ কিছুটা জাগরণ ঘটাতে পেরেছিল।



দশম শ্রেণীর ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo (ষষ্ঠ অধ্যায়)" রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর" । WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History 6th Chapter DAQ Questions and Answers | 

Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Detailed Question and Answer

রচনাধর্মী বা বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর (প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫)


১. সমাজতন্ত্র প্রসারে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান বর্ণনা করো। কংগ্রেস থেকে তাঁকে বিতাড়িত হতে, হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ-   
প্রথম অংশ – ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা বিকাশের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। সমাজতান্ত্রিক ভাবনার প্রতি অবিচল থাকতে গিয়ে কংগ্রেস থেকে তাঁকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল। আসলে ঘরে-বাইরে তিনি ছিলেন আপোষহীন সংগ্রামী নায়ক।

সুভাষের সমাজতান্ত্রিক ভাবনার উৎস – স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাচেতনা, ত্যাগ ও সেবার আদর্শ সুভাষচন্দ্রকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল। বিবেকানন্দের মতোই সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস করতেন, ভারতবাসীর বড় অভিশাপ হল দারিদ্র এবং এই দারিদ্র্যের মূল কারণ ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ। তিনি মনে করতেন, সমাজতন্ত্রের উদ্ভব কার্লমার্কস থেকে হয়নি, তার শিকড় নিহিত ছিল ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যে।

সুভাষচন্দ্রের সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা – তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন ও সামাজিক অসাম্য দূর করার কথা বলেছিলেন। সুভাষচন্দ্র নিজেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী বলেছেন। সুভাষচন্দ্র চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষের নিজস্ব সমাজতন্ত্র গড়ে উঠুক তার নিজের ভূগোল ও ইতিহাসের ভিত্তিতে—যা সমন্বয় সাধিত সমাজতন্ত্র গঠনে সহায়তা করবে। লাহোর-এ অনুষ্ঠিত ছাত্র সম্মেলনের উদবোধনী ভাষনে তিনি বলেছিলেন, এই স্বাধীনতার লক্ষ্য কেবল রাজনৈতিক বন্দীদশা থেকে মুক্তিনয়; এর লক্ষ্য সম্পদের সমবন্টন, জাতিভেদ প্রথার অবসান ও সামগ্রিক সাম্যের প্রতিষ্ঠা। এই স্বাধীনতার লক্ষ্য সাম্প্রদায়িকতার অবসান এবং ধর্মীয় সহনশীলতার বাতাবরণ তৈরি করা। এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য তিনি ইয়ং ইতালি দলের আদর্শে ভারতের ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি নানা স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

হরিপুরা কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচন – কংগ্রেসের বামপন্থী গোষ্ঠীকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রকে কংগ্রেস সভাপতির পদে আসীন করা হয়। সুভাষচন্দ্র বামপন্থী মনোভাব এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামী মানসিকতার জন্য সুপরিচিত। গান্ধিজির আপোষমুখী মনোভাবের তিনি ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। মত ও পথের তীব্র সংঘাত সত্ত্বেও গান্ধিজি সুভাষকে সভাপতি করার প্রস্তাব দেন। অনেকে বলেন বামপন্থীদের চাপ ও সুভাষের প্রতি অবহেলার প্রতিদান হিসেবে গান্ধিজি তাঁকে সভাপতি পদে মনোনীত করেছিলেন।

গান্ধি-সুভাষ বিরোধের সূত্রপাত – হরিপুরা অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে তিনি প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্র গঠন (১৯৩৫-এর ভারতশাসন আইনানুযায়ী) ও মন্ত্রীসভা গঠনের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনগুলিকে কংগ্রেসের অধীনে এনে সাম্রাজ্যবাদী বিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সুভাষচন্দ্র ভারতে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের কর্মপন্থাকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানান এবং সোভিয়েত রাশিয়ার ধাঁচে ভারতের পুনর্গঠনের জন্য প্ল্যানিং কমিশন গঠনের কথা বলেন। সভাপতি রূপে সুভাষের কার্যাবলি ও চিন্তাধারা গান্ধিজি অনুমোদন করতে পারলেন না। রাশিয়ার অনুকরণে প্ল্যানিং কমিশন গঠন করার প্রস্তাবও গান্ধি মেনে নিতে পারলেন না। এই রূপ নানা প্রশ্নে গান্ধি-সুভাষের মত পার্থক্য প্রকট হয়ে উঠতে লাগল।

দ্বিতীয় অংশ –

ত্রিপুরি অধিবেশন ও সুভাষচন্দ্র – ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র দ্বিতীয়বারের জন্য সভাপতি পদ প্রার্থী হলে গান্ধিজি আপত্তি জানান। এতদিন পর্যন্ত গান্ধিজিই কংগ্রেস সভাপতি মনোনীত করতেন এবং কারো কোনো আপত্তি উঠত না। গান্ধিজি ত্রিপুরি কংগ্রেস আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি মনোনীত করেন। কিন্তু তিনি রাজী না হওয়ায় পট্টভি সীতারামাইয়াকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়। মনোনয়ন প্রত্যাহারের ব্যাপারে কংগ্রেস কার্য নির্বাহক সমিতির অনুরোধ সত্ত্বেও সুভাষ নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। ২৯ জানুয়ারি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে এই নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র ২০৩ টি (সুভাষের পক্ষে ১৫০০ এবং বিপক্ষে ১৩৭৭) ভোটের ব্যবধানে গান্ধি মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করেন।

প্রতিক্রিয়া – সুভাষচন্দ্রের বিজয়লাভে গান্ধিজি ও তাঁর অনুগত দক্ষিণপন্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

সভাপতির পদে ইস্তফা – সুভাষচন্দ্র জানতেন যে, সংগঠন চালানোর জন্য গান্ধিজির নেতৃত্ব ও সহযোগিতা আবশ্যিক। কিন্তু সুভাষের প্রতি গান্ধিজির অনমনীয় মনোভাব সুভাষকে হতাশ করে। হতাশ সুভাষ মন্তব্য করেন, আমি যখন দেশের শ্রেষ্ঠ মানুষটির আস্থা হারিয়েছি তখন আমার আর সভাপতি থেকে কাজ নেই। অতঃপর ২৯ এপ্রিল ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতির পদে ইস্তফা দেন।

ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন – অতঃপর ৩ মে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই ফরওয়ার্ড ব্লক নামে এক নতুন দল গঠন করেন। সুভাষচন্দ্র নিজেই এই দলের সভাপতি হন। তিনি বামপন্থীদের সংঘবদ্ধ করার জন্য কংগ্রেসের উপদল হিসেবে ফরওয়ার্ড ব্লককে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল, কমিউনিস্ট পার্টি ও মানবেন্দ্রনাথ রায়ের গোষ্ঠী — কেউই তাঁর সাথে এক সঙ্গে চলতে রাজী হল না।

কংগ্রেস থেকে বহিঃস্কার – সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ১১ আগস্ট ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্রকে তিন বছরের জন্য কংগ্রেসের কোনো পদ গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এভাবেই কংগ্রেসের রাজনীতি থেকে সুভাষচন্দ্রের চিরবিদায় ঘটে। তিনি আর কোনো দিন কংগ্রেসের ফিরে আসেননি। এভাবেই শেষ পর্যন্ত বামপন্থী ঐক্যের স্বপ্ন ও মায়া মরীচিকার মতো মিলিয়ে যায়।

২. বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনা ও প্রসার আলোচনা করো । 
উত্তরঃ-  প্রথম অংশ : সূচনা ও প্রসারে বাংলার ভূমিকা ছিল খুব উজ্জ্বল । 

আন্দোলনের সূচনা : বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনাপর্বে দেখা যায় যে – 

এম . এন . রায়ের ভূমিকা : বাঙালি বিপ্লবী ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক মানবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরেই রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ( ১৯২০ খ্রি . ) । আবার তিনিই ভারতের অভ্যন্তরে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নলিনী গুপ্ত ও শওকত ওসমানীর মাধ্যমে অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীসহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন ( ১৯২১ খ্রি . ) । 

বাংলার কমিউনিস্ট গোষ্ঠী : রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও তার আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতে কলকাতা , মাদ্রাজ , বোম্বাই , লাহোর প্রভৃতি শহরে সাম্যবাদী মতাদর্শযুক্ত গোষ্ঠী গড়ে ওঠে । কলকাতায় এরুপ একটি কমিউনিস্ট গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন মুজাফ্ফর আহমেদ । তিনি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত হন ও চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন । 

কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা : ভারতের বিক্ষিপ্ত কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিষ্ট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এখানেই সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় । 

দ্বিতীয় অংশ : কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রসার : ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর যেভাবে এই আন্দোলনের প্রসার ঘটে তা হল –

শ্রমিক – কৃষক পার্টি : বাংলার কমিউনিস্টরা ( মুজাফ্ফর আহমেদ , কাজি নজরুল ইসলাম , হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ ) শ্রমিক ও কৃষককে সংগঠিত করে সাম্যবাদী আন্দোলন পরিচালনার জন্য বাংলার ‘ ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ ‘ পার্টি গঠন করে ( ১৯২৫ খ্রি . ) । এই পার্টির অনুকরণে বোম্বাই , পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশেও অনুরূপ পার্টি গড়ে ওঠে এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ ’ পার্টি । 

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা : ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্ট দমনের জন্য ৩২ জন কমিউনিস্ট নেতা বা শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করেন ( ১৯২৯ খ্রি . ) । এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , এই অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন বাংলার মুজাফ্ফর আহমেদ , কিশোরীলাল ঘোষ , ধরণী গোস্বামী , গোপেন চক্রবর্তী , রাধারমণ মিত্র , গোপাল বসাক ও শিবনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ । 

কলকাতা কমিটি : মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পর আব্দুল হালিম প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতা বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধারাকে বজায় রাখেন । আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে গঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ‘ কলকাতা কমিটি ‘ ( ১৯৩১ খ্রি . ) । মাধ্যমিক ইতিহাস ও পরিবেশ স 8 ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের উদ্যোগ : স্বামী বিবেকানন্দের ভাই ড . ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গড়ে ওঠে । ‘ ইন্ডিয়ান প্রোলেটারিয়ান রেভোলিউশনারী পার্টি ‘ ( ১৯৩১ খ্রি . ) । পরবর্তীকালে এই পার্টি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় । 

উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে , বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের গোড়াপত্তনের অন্যতম প্রধান অংশীদার ।


৩. বিশ শতকের কিয়ান আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস ও বামপন্থীদের সম্পর্ক আলোচনা করো । 
উত্তরঃ-  ভূমিকা : বিশ শতকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যে কিষান আন্দোলনগুলি ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সংগঠিত হয়েছিল , সেগুলির ওপর জাতীয় কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থাকলেও চল্লিশের দশকে এই কিষান আন্দোলনগুলি কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে । 

কিষান আন্দোলনের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক : কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে দ্বিমুখী নীতি : জাতীয় কংগ্রেস কৃষক আন্দোলনকে জাতীয় সংগ্রামের মূল স্রোতের সঙ্গে বেঁধে রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল । কৃষকদের জন্য এবং কৃষকদের নেতৃত্বে কোনোরকম শ্রেণি সংগ্রাম গড়ে তোলার ইচ্ছা কংগ্রেস নেতাদের ছিল না । 

কৃষক আন্দোলনের নিয়ন্ত্রক : কৃষক আন্দোলনে সামান্যতম হিংসার প্রকাশ পেলে কংগ্রেস কৃষকদের উৎসাহ উদ্দীপন রাশ টেনে ধরত । এর ফলে ভারতের কৃষক আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । 

গান্ধিজির চিন্তাধারা : অনেকে মনে করেন , শ্রেণিসংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেণি – সহযোগিতায় বিশ্বাসী গান্ধিজি শ্রেণিসংগ্রামের পথ এড়িয়ে গ্রাম পুনর্গঠন ও খাদি আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষকদের স্বনির্ভর করে তুলতে চেয়েছিলেন । 

গান্ধিজির প্রতি কৃষকদের আস্থা : কৃষকরা অন্তর থেকে বিশ্বাস করত যে , ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারতে গান্ধিরাজ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তাদের দুঃখের দিন শেষ হবে । এজন্য গান্ধিজি পরিচালিত আন্দোলনগুলিতে কৃষকদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল । 

মূল্যায়ন : 
কংগ্রেস কৃষক আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত ধারাকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেও কংগ্রেসি নেতাদের আপস নীতি ও অহিংসা নীতি কৃষক সমাজকে কংগ্রেসের প্রতি বিমুখ করে তোলে । গান্ধিবাদী বাবা রামচন্দ্র কংগ্রেসি নীতিতে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত লেনিন ও রাশিয়ার প্রশংসা করতে থাকেন । 

কিষান আন্দোলনের সঙ্গে বামপন্থীদের সম্পর্ক : কংগ্রেসি আন্দোলনে হতাশ হয়েই অনেক কৃষক নেতা বামপন্থীদের দিকে ঝুঁকলেও কমিউনিস্টদের পক্ষে কৃষকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করা কঠিন কাজ ছিল । শ্রেণিসংগ্রাম গড়ে তোলার প্রতিবন্ধকতা : আদিবাসী কৃষক , বর্গাদার , দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে কমিউনিস্টদের ব্যাপক প্রভাব থাকলেও আঞ্চলিক বৈষম্য , ধর্মীয় বিভেদ , জাতিভেদ প্রথা অর্থাৎ , গ্রামীণ সমাজের কাঠামোগত জটিলতা শ্রেণিসংগ্রাম গড়ে তোলার পথে অন্তরায়ের সৃষ্টি করেছিল । 

কমিউনিস্টদের কর্মাবিধি নিয়ন্ত্রণ : সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি প্রভাবিত কমিন্টার্নের নির্দেশে ভারতীয় কমিউনিস্টদের কর্মবিধি নিয়ন্ত্রিত হত বলে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারত না । 

কৃষকদের ওপর কমিউনিস্টদের প্রভাব : বাংলা ও বিহারে কমিউনিস্টরা কংগ্রেসের কিষান আন্দোলনের বিকল্প হিসেবে নিজেদের একটা ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল — যা কংগ্রেসের কাছে মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় । এই কারণে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেস তাদের কর্মীদের কিষান সভার কার্যাবলি থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল ।

বিশ্বযুদ্ধোত্তর কৃষক আন্দোলন নেতৃত্ব : বিশ শতকের চল্লিশের দশকে স্বাধীনতার প্রাক্কালে যেসব কৃষক আন্দোলন ( যেমন- তেভাগা , তেলেঙ্গানা , পুন্নাপ্রা – ভায়লার ) সংগঠিত হয়েছিল সেগুলি কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীন পরিচালিত হয়েছিল । 

মুল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় যে , কৃষক আন্দোলনকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষকদের অনেকেই কিষান সভা ও কংগ্রেসের সদস্যপদ নিয়েছিল — যা আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত করতে সাহায্য করেছিল ।


৪. ভারতছাড়ো আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ কীরূপ ছিল?
উত্তরঃ-   
ভূমিকা – ১৯৪২-র ভারতছাড়ো আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং একটি প্রকৃত গণআন্দোলন। এই আন্দোলনে কৃষক শ্রেণি অভূতপূর্ব খাড়া দিয়েছিল। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক শ্রেণিকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা যায়নি।

কৃষক শ্রেণির ভূমিকা – ভারতছাড়ো আন্দোলনে কৃষক সম্প্রদায়ের যোগদান এই আন্দোলনকে জঙ্গী চরিত্রদান করে। কৃষক আন্দোলনের ব্যপকতার বিভিন্ন দিকগুলি হল —

আসাম, বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানের কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে যোগ দেয়।
বহু স্থানে কৃষকরা সরকারি খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বাংলার বিভিন্ন জেলায় কৃষক আন্দোলন গণ বিদ্রোহের চরিত্র গ্রহণ করে।
মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার-গঠনের মাধ্যমে কৃষকরা সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করতে থাকে।
শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা – ১৯৪২-র ভারতছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে ভারতের কমিউনিস্ট দল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে রাতারাতি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুদ্ধের পরিবর্তে জনযুদ্ধ বলে ঘোষণা করে এবং নীতিগত কারণে ভারতছাড়ো আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগত বিবেকের তাড়নায় কোনো কোনো কমিউনিস্টকর্মী ভারতছাড়ো আন্দোলনে বেসরকারীভাবে ব্যক্তিগত সমর্থন জানায়। তারই একটি অংশ ছিল শ্রমিক শ্রেণি।

শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতা –

গান্ধিজি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ করার প্রতিবাদে বোম্বাই, নাগপুর, আমেদাবাদ প্রভৃতি শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা এক সপ্তাহ ধরে ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করে।
জামশেদপুরে লৌহ ইস্পাত কারখানায় দুই মাস ধরে ধর্মঘট পালন করা হয়।
উপসংহার – ব্রিটিশ সরকার ভারতছাড়ো আন্দোলনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টিকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। তাই কমিউনিস্ট পরিচালিত শ্রমিক আন্দোলনের ভূমিকা আশাব্যঞ্জক না হলেও কৃষক শ্রেণির অভূতপূর্ব সাড়া-শ্রমিক শ্রেণির কিছু অংশের অনীহাকে পুষিয়ে দিয়েছিল। তবে অধ্যাপক আদিত্য মুখার্জীর মতে, পার্টির লাইন আলাদা হওয়া সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ কমিউনিস্ট কর্মীরা ভারতছাড়ো আন্দোলন সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।


৫. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ-   
ভূমিকা – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী বা স্বদেশী আন্দোলন (১৯০৫-১৯১১ খ্রি.) ছিল ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের সূচনাকাল। এই সময় থেকেই পেশাদারী আন্দোলনকারী এবং শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে। যার প্রতিফলন পড়ে স্বদেশী আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণে।

নেতৃবৃন্দ – বিশ শতকের গোড়া থেকেই লালা লাজপত রায়, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতারা শ্রমিকদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। স্বদেশী যুগে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার জন্য — কুসুম রায় চৌধুরী, অপূর্ব কুমার ঘোষ, অশ্বিনী কুমার ব্যানার্জি, প্রেমতোষ বসু আত্মনিয়োগ করেন।

শ্রমিক আন্দোলন – স্বদেশী আন্দোলনকে উপলক্ষ্য করে জাতীয়তাবাদী নেতাদের নেতৃত্বে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন ও ধর্মঘট শুরু হয়। জাতীয়তাবাদী নেতারা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দাবীর প্রতি সমর্থন জানায়।

বাংলা – বঙ্গভঙ্গের দিন (১৬ অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ) হাওড়ার বার্ন কোম্পানির ১২ হাজার শ্রমিক বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করে। কলকাতায় প্রিন্টার্স অ্যান্ড কম্পোপ্রিন্টার্স লীগ গঠিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া রেলপথের কর্মীরা চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে আন্দোলনে শামিল হয়। বাংলায় পাটকলগুলিতেও ধর্মঘট চলে।

তামিলনাড়ু – তামিলনাড়ুর তুতিকোরিণে বাড়তি মজুরির দাবিতে চিদাম্বরম পিল্লাই-এর নেতৃত্বে ধর্মঘট শুরু হয়। চিদাম্বরম পিল্লাই গ্রেপ্তার হলে শ্রমিকরা দাঙ্গা বাধায়।

বোম্বাই – বোম্বাইও এই আন্দোলন থেকে পিছিয়ে ছিল না। সেখানেও তিলকের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বস্ত্রকলগুলিতে ধর্মঘট শুরু হয়। পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধ হয়। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই – এ ৮ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয়।

অন্যান্য স্থানে – কানপুর ও আমেদাবাদেও ধর্মঘটের দ্বারা শ্রমিকরা আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। জামালপুরেও রেলওয়ে ওয়ার্কশপে ধর্মঘট শুরু হয়।

উপসংহার – ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্রের মতে, শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশী আন্দোলন ছিল একটি দিকচিহ্ন। অন্যদিকে ঐতিহাসিক সুমিত সরকারের মতে, বঙ্গভঙ্গ কালে বাংলায় কোনো যথার্থ রাজনৈতিক ধর্মঘট ঘটেনি।


৬. তেভাগা আন্দোলনের সূচনা ও পরিণতি আলোচনা করো । 
উত্তরঃ-  ভূমিকা : ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষানসভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন শুরু হয় । 

তেভাগা কেন ? : কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষানসভা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেভাগা আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে । 

মূল দাবি ছিল— 
(১ ) উৎপন্ন ফসলের ২/৩ ভাগ কৃষকের প্রাপ্য এবং মালিক পারে ১/৩ অংশ ;
 ( ২ ) জমিতে ভাগচাষিকে দখলিস্বত্ব দিতে হবে ; 
( ৩ ) ১২ শতাংশ – এর বেশি সুদ মহাজন বা জমিদাররা দাবি করতে পারবে না ;
 ( ৪ ) কোনো কাজে কর ( আবওয়াব ) আদায় করা যাবে না ; 
( ৫ ) ফসলের ভাগ নিয়ে রসিদ দিতে হবে ;
( ৬ ) ভাগচাষির খামারে ধান তুলতে হবে ; 
( ৭ ) আধি নয় , তেভাগা চাই , কজ ধানের সুদ নাই ; এবং 
( ৮ ) ১ মণে ৫ সের – এর বেশি সুদ নেওয়া যাবে না । 

প্রসার : তেভাগা আন্দোলন বাংলার প্রায় সব জেলায় শুরু হয়েছিল — দিনাজপুর , ময়মনসিং , কাকদ্বীপ , রংপুর , বগুড়া , জলপাইগুড়ি , যশোর , খুলনা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম । বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল । এই বিদ্রোহের চরিত্রগত স্বাতন্ত্র্য উল্লেখ করে ঐতিহাসিক ধনাগারে লিখেছেন , ‘ It was the first consciously attempted revolt by a politicised Peasantry in Indian History . ” 

নেতৃবৃন্দ : তেভাগা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য নেতা , নেত্রীরা হলেন– গুরুদাস তালুকদার , ভবানী সেন , অবনী রায় , ভবানী সেন , চারু মজুমদার , সমর গাঙ্গুলী , সুশীল সেন , জলপাইগুড়ির রাজবংশী বৃদ্ধা মহিলা বুড়িমা প্রমুখ । পরিণতি : সরকারের কঠোর দমননীতি , সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা , সার্বিক ঐক্যের অভাব ইত্যাদি কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হলেও পরবর্তীকালে বর্গাদার আইন , বাংলা ভূমিস্বত্ব আইন , জমিদারি উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তেভাগা আন্দোলনের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না । এগুলি হল – 

দাবির স্বীকৃতি : তেভাগা আন্দোলনের ব্যাপকতায় পশ্চিমবঙ্গা সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে তেভাগার দাবি মেনে নেয় ( অক্টোবর , ১৯৪৯ খ্রি . ) ( ২ ) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই আন্দোলনে হিন্দু তথাকথিত নিম্নবর্গের হিন্দু ( রাজবংশী , নমঃশূদ্র ) , আদিবাসী ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছিল । 

সংগ্রামী চেতনা : এই আন্দোলন কৃষকদের সংগ্রামী চেতনাকে তুলে ধরে কৃষক আন্দোলন ও শ্রেণি সংগ্রামের নজির তুলে ধরেছিল । 

কমিউনিস্ট দলের প্রভাব : কমিউনিস্ট পার্টি এই আন্দোলনের কর্মসূচি ও রণকৌশল নির্ধারণ করে আন্দোলনকে সফল করেছিল এবং বাংলার কৃষক সমাজের ওপর প্রভাব স্থাপনে সমর্থ হয়েছিল । 

৭. ভারত ছাড়ো আন্দোলনকালে বিহার ও বাংলার কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো । অন্যান্য রাজ্যে এই আন্দোলনের বিস্তার কেমন ছিল ? 
উত্তরঃ-  ভূমিকা : মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলেও তা ছিল কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত এবং কৃষকসহ জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলন । 

কয়েকটি আন্দোলন কেন্দ্র : ভারত ছাড়ো আন্দোলনকালে ভারতের সবজায়গায় কৃষক আন্দোলন একইভাবে পরিচালিত হয়নি , কারণ— 

বিহার : বিহারে কিষান সভার নেতৃত্বে পরিচালিত কৃষক আন্দোলন ছিল উগ্র এবং তা বিহারের সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছিল । রেলওয়ে স্টেশন , পৌরভবন ও ডাকঘরে অগ্নিসংযোগ ছিল আন্দোলনের বিভিন্ন দিক । 

বাংলা : বাংলার কলকাতা , দিনাজপুর , বাঁকুড়া , পুরুলিয়া , মেদিনীপুর ছিল কৃষক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র । মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমা , পটাশপুর থানা , খেজুরি থানা এলাকায় কৃষকেরা জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয় এবং জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । 

অন্যান্য রাজ্যে বিস্তার ছাড়ো আন্দোলনের সূচনার পর কৃষকদের যোগদান : ভারত বাংলা , বিহার , উড়িষ্যা , আসাম , উত্তরপ্রদেশ , মধ্যপ্রদেশ , অন্ধ্রপ্রদেশ , গুজরাট , কেরালা প্রভৃতি স্থানে কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেছিল । 

গুজরাট : গুজরাটের সুরাট , আমেদাবাদ , রাজকোট , পোরবন্দর , খান্দেশ , ব্রোচ প্রভৃতি স্থানে কৃষকরা গেরিলা কায়দায় আন্দোলন পরিচালনা করেছিল । সুরাট : সুরাটের কৃষকরা রেল অবরোধ করে , যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন করার পাশাপাশি সরকারি নথিপত্রও পুড়িয়ে দেয় । 

অন্যান্য স্থান : উড়িষ্যার তালচের , পাঞ্জাবের পাতিয়ালা , আসামের তেজপুর , মধ্যপ্রদেশের নাগপুর , বোম্বাই – এর খান্দেশ প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকদের যোগদান ছিল খুব উল্লেখযোগ্য । 

নেতৃত্ব : এই আন্দোলনগুলি সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কৃষকদের উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন নেতা ও কৃষক সংগঠনের উদ্যোগও ছিল , যেমন পাঞ্জাবের আন্দোলনে ‘ নওজোয়ান ভারত সভা ‘ বা ‘ কীর্তি কিষান ’ , উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে সমাজবাদী কংগ্রেস নেতা নবকৃয় চৌধুরীর নাম করা যায় । 

উপসংহার : ভারত ছাড়ো আন্দোলনকালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও মুসলিম লিগ অংশগ্রহণ না করায় কৃষকদের যোগদান ছিল সীমিত । তথাপি ভারতের বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের যোগদান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত । 


৮. আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষক শ্রেণির ভূমিকা কী রূপ ছিল?
উত্তরঃ-   
ভূমিকা – আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির তেমন উৎসাহ লক্ষ্য করা না গেলেও কৃষকরা বিপুল সংখ্যায় এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে তা পুষিয়ে দেয়। এই সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গী কৃষক আন্দোলন দানা বাঁধে। বামপন্থী মনোভাবাপন্ন কংগ্রেসের সমাজতান্ত্রিক নেতারা এই সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

কৃষক শ্রেণি ও আইন অমান্য আন্দোলন – ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ কৃষক শ্রেণিকে জঙ্গী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাদের মধ্যে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে চেতনা জাগ্রত হয়। কৃষকদের খাজনা বন্ধকে কংগ্রেসের কর্মসূচীর অন্তর্গত করা হয়।

উত্তরপ্রদেশের কিষাণ আন্দোলন – উত্তরপ্রদেশে কিষাণ আন্দোলনের সমর্থন ছাড়া আইন অমান্য আন্দোলনকে গণআন্দোলনে পরিণত করা কঠিন ছিল। সরকারী খাজনা বন্ধ করার মধ্য দিয়েই উত্তরপ্রদেশে কিষাণ আন্দোলন শুরু হয়। জমিদার ও তালুকদারদেরও খাজনা বন্ধ করা হয়। রায়বেরিলি, আগ্রা, বারঝাকি প্রভৃতি জেলায় আন্দোলন প্রসারিত হয়। জওহরলাল নেহরু এই কিষাণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

গুজরাটের কিষাণ আন্দোলন – গুজরাটের সুরাট ও খেদা অঞ্চলের কৃষকরা খাজনা বন্ধ করে দেয়। সরকারী দমননীতি থেকে রক্ষা পেতে তারা প্রতিবেশি বরোদা রাজ্যে আশ্রয় নেয়। বহু কৃষকের জমি নীলামে বিক্রি হয়।

বাংলার কিষাণ আন্দোলন – বাংলার কিশোরগঞ্জে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। বাংলায় চৌকিদারী কর বন্ধ করা হয়।

অন্যান্য স্থানে – এছাড়াও পাঞ্জাবে জলসেচ কর ও ভূমিরাজস্ব হ্রাসের দাবী জানানো হয়, বিহারে যদুনন্দন শর্মার নেতৃত্বে কিষাণ আন্দোলন, কৃয়া জেলায় খাজনা বন্ধের আন্দোলন প্রভৃতি ছিল আইন অমান্য আন্দোলনের সময় উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন।

উপসংহার – আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকদের শামিল করে কংগ্রেসী নেতারা কৃষক আন্দোলনকে সর্বদাই সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত রাখতেন এভাবে কৃষক আন্দোলনের স্বয়ংক্রিয় ও চরমপন্থী চরিত্র গ্রহণে বাধাদান করেন।

৯. বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলন প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো । 
উত্তরঃ-  ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকের ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিক্ষিপ্তভাবে কৃষক আন্দোলন শুরু হলেও বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বলিষ্ঠ কৃষক আন্দোলন আত্মপ্রকাশ করে । 

কৃষক আন্দোলন : বিশ শতকের কৃষক আন্দোলনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – 

চম্পারণ সত্যাগ্রহ : বিহারের চম্পারণে তিনকাঠিয়া প্রথার বিরুদ্ধে সংগঠিত কৃষক আন্দোলনে গান্ধিজি যোগদান করেন । ( ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ ) ও তা সাফল্যমণ্ডিত করেন । 

খেদা সত্যাগ্রহ : গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকরা ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে খাজনা হ্রাসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে গান্ধিজি খেদার কৃষকদের নিয়ে খাজনা বৃদ্ধির প্রতিবাদে খেদা সত্যাগ্রহ ( ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ ) শুরু করেন ।

মোপলা বিদ্রোহ : অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কেরালার মালাবার অঞ্চলে মোপলা নামক মুসলিম কৃষকরা স্বরাজের সমর্থনে জমিদার – বিরোধী ব্যাপক কৃষক আন্দোলন শুরু করে । 

একা আন্দোলন : ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের উদ্যোগে এবং মাদারি পাশির নেতৃত্বে কৃষকরা একতা বা ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ গ্রহণ করে হরদোই , সীতাপুর , বারাচ , বারবাঁকি জেলায় ব্যাপক কৃষক আন্দোলন শুরু করে । 

বারদৌলি সত্যাগ্রহ : গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে সরকার ৩০ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি করলে বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে কৃষকরা খাজনা না দেওয়ার আন্দোলন শুরু করে । শেষপর্যন্ত খাজনা বৃদ্ধিতে আটকানো সম্ভব হয় । 

বখস্ত আন্দোলন : বিহারে খাজনা বাকি পড়ায় জমিদাররা কৃষকদের জমিগুলি বাজেয়াপ্ত করে ‘ বখস্ত ’ বা খাসজমিতে পরিণত করে কৃষকদের উচ্ছেদ করতে থাকলে বিহারের কিষান নেতা স্বামী সহজানন্দের নেতৃত্বে কৃষকরা সংগঠিত হয় । গয়া , মুঙ্গের , দ্বারভাঙ্গা , সরন প্রভৃতি জেলায় আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে । 

তেভাগা আন্দোলন : দ্বিতীয় যুদ্ধোত্তরকালে বঙ্গীয় কৃষক সভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন শুরু হয় । কৃষকরা যে জমিতে চাষ করে তার ওপর দখলি স্বত্ত্বপ্রদানের দাবি করে বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিল । চারু মজুমদার , ভবানী সেন , সমর গাঙ্গুলী , গুরুদাস তালুকদার , সুনীল সেন প্রমুখ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । 

পুন্নাপ্রা – ভায়লার গণ আন্দোলন : ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের কৃষক ও শ্রমিকরা সেখানকার দেওয়ান রামস্বামী আয়ারের বিরুদ্ধে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে যে গণসংগ্রাম পরিচালিত করেছিলেন তা পুন্নাপ্রা – ভায়লার গণসংগ্রাম নামে খ্যাত । তেলেঙ্গানা আন্দোলন : হায়দরাবাদের নিজামের স্বৈরাচারী শাসন ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে ৯ টি তেলুগু ভাষাভাষীর জেলার তিন হাজার গ্রামের প্রায় ৩০ লক্ষ কৃষক কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা আন্দোলনে শামিল হয়েছিল । 

মূল্যায়ন : এভাবে দেখা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যেসব কৃষক আন্দোলন হয়েছিল সেগুলির ওপর কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল । কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কৃষক আন্দোলনগুলি ছিল পুরোপুরি কমিউনিস্ট পরিচালিত । ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী অভ্যুত্থান হিসেবে কৃষক আন্দোলনগুলির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না । 

১০. বিশ শতকের শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট দলের সম্পর্ক আলোচনা করো ।
উত্তরঃ-  ভূমিকা : সাম্রাজ্যবাদ – বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে নতুন ধারার সংযোজন হল – শ্রমিক আন্দোলন । বিশের দশকে শ্রমিক আন্দোলনের রাশ কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও , কালের বিবর্তনে রুশবিপ্লব , প্রথম বিশ্বজনিত অর্থনৈতিক মন্দা শ্রমিক আন্দোলনের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল । 

শ্রমিক আন্দোলনের প্রতি কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি : কংগ্রেস পরিচালিত জাতীয় আন্দোলনের স্বার্থে দেশীয় শিল্পপতিদের সক্রিয় সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতা অপরিহার্য ছিল । তাই শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলন করে কংগ্রেস শিল্পপতিদের সমর্থন হারাতে চায়নি । অন্যদিকে , শ্রমিক শ্রেণির কাছে স্বাধীনতা অপেক্ষা নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নই বেশি কাম্য ছিল । 

শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে গান্ধিজির দৃষ্টিভঙ্গি : গান্ধিজি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে আমেদাবাদ সুতিকল শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের পক্ষে অনশন সত্যাগ্রহ শুরু করে সফল হল এবং শ্রমিকদের কাছে গান্ধিজির ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায় । কিন্তু গান্ধিজি শ্রেণিসংগ্রামের পরিবর্তে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহাবস্থানে বিশ্বাসী ছিলেন , শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করার পক্ষপাতী তিনি ছিলেন না । 

গঠন : ১৯১৯ এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অমৃতসর ও গয়া অধিবেশনে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগের ফলশ্রুতি হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন AITUC লালা লাজপত রায় ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতিরূপে জওহরলাল নেহরুর নির্বাচন শ্রমিক আন্দোলনকে কংগ্রেসের কাছাকাছি নিয়ে আসে । 

বামপন্থী ও শ্রমিক আন্দোলন : অসহযোগ আন্দোলন পরবর্তীকালে শ্রমিকদের মধ্যে কমিউনিস্ট ভাবধারার বিস্তার ছিল শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য । ( 1 ) বামপন্থী আদর্শের প্রতি শ্রমিকদের ঝোঁক রুশবিপ্লব , প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জনিত অর্থনৈতিক মন্দা , জাতীয় আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা শ্রমিক শ্রেণিকে কমিউনিস্ট আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে । কমিউনিস্টদের ঘোষিত নীতিই ছিল শ্রেণি সংগ্রাম । শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্ট প্রভাব কমিউনিস্ট নেতারা রাজনৈতিক দাবির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার প্রশ্নটি সকলের সামনে তুলে ধরলে কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীনে সংগঠিত হতে থাকে নানা শ্রমিক সংগঠন । বোম্বাই – এর গিরনি কামগার ইউনিয়ন ছিল পুরোপুরি কমিউনিস্ট প্রভাবাধীন । 

মূল্যায়ন : শ্রমিক আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রমিকরা কংগ্রেস বা কমিউনিস্ট নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও কংগ্রেসের মধ্যে নানা মতভেদ ও কমিউনিস্টদের পরিবর্তনশীল নীতি অনেক সময় শ্রমিক আন্দোলনকে বিপথগামী করে তোলে ।

১১. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভব কিভাবে হয়?
উত্তরঃ-   
ভূমিকা – বিশ শতকের দ্বিতীয় শতক থেকেই ভারতের কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একটি বামপন্থী মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটে — যার ফলশ্রুতিরূপে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

প্রেক্ষাপট – কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভবের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে

রুশ বিপ্লবের প্রভাব ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রাধান্য
অসহযোগ আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা
শ্রমিক-কৃষক ও সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুদর্শায় কংগ্রেস নেতৃত্বের উদাসীনতা
কমিউনিস্ট কার্য কলাপের প্রভাব
সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর প্রভাব
আইন অমান্য আন্দোলনের ব্যর্থতা প্রভৃতি কারণে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একটি বামপন্থী গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল গঠন – ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পাটনায় আচার্য নরেন্দ্রদেবের সভাপতিত্বে সর্বভারতীয় সমাজতন্ত্রী সম্মেলনে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল গঠনের প্রস্তাব নেওয়া হয়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ২৩ অক্টোবর বোম্বাই-এ আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল আত্মপ্রকাশ করে।

নেতৃত্ববৃন্দ – আচার্য নরেন্দ্রদেব, জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পটবর্ধন, রাম মনোহর লোহিয়া, ইউসুফ মেহের আলি, মিনু মাসানি প্রমুখরা ছিলেন কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের মুখ্য সঞ্চালক।

উদ্দেশ্য – এই দলের মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি ছিল –

স্বাধীনতার জন্য জাতীয় সংগ্রামকে ভারতের প্রাথমিক সংগ্রামে পরিণত করে
জাতীয়তাবাদ সমাজতন্ত্রের পথে একটি প্রয়োজনীয় পর্যায়
সমাজতন্ত্রী হিসেবে ভারতীয় কংগ্রেসের মধ্য থেকে কাজ করা, কারণ কংগ্রেস একটি নেতৃত্বদানকারী প্রাথমিক সংগঠন। আদতে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে থেকে বামপন্থী শক্তিকে সুদৃঢ় করা।
কর্মসূচী – কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের কর্মসূচীগুলি হল —

জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী আইনকে বাতিল করতে হবে
স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের অপরাধে জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া কৃষক ও চাষীর জমি ফেরত দিতে হবে
অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে
ধর্মঘট, পিকেটিং ও ইউনিয়ন গঠনের অধিকার দিতে হবে
জমিদারি ও তালুকদারি প্রথার বিলোপ ঘটাতে হবে, এবং
মতামত প্রকাশের অধিকার দিতে হবে।
উপসংহার – ১৯৪২ সালের ভারতছাড়ো আন্দোলনে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী অপ্রত্যাশিত সাহায্য করেছিল। তাদের মধ্যে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল।

১২. গান্ধিজি কোন্ দুটি কৃষক আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন ? 
উত্তরঃ-  প্রথম অংশ : স্থানীয় কৃষক আন্দোলনে সফলভাবে নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের শীর্ষ নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধির রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল । এইরকম দুটি উল্লেখযোগ্য আন্দোলন ছিল চম্পারণ ও খেদার কৃষক আন্দোলন । 

চম্পারণ আন্দোলন : 
রাসায়নিক পদ্ধতিতে কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের পর ভারতে নীলচাষ উঠে গেলেও বিহারের চম্পারণসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘ তিনকাঠিয়া ‘ ( ২০ কাঠার মধ্যে ৩ কাঠা বা জমির ৩/২০ অংশ ) প্রথায় নীলচাষ করা হত । তাই চম্পারণে বলপূর্বক নীলচাষ করানো এবং নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীলচাষিরা স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল । 

গান্ধিজির যোগদান : 
চম্পারণের কয়েকজন মানুষের আবেদনে গান্ধিজি রাজেন্দ্র প্রসাদ , আচার্য কৃপালনী , মহাদেব দেশাই প্রমুখ তরুণ জাতীয়তাবাদী নেতাকে সঙ্গে নিয়ে চম্পারণে পৌঁছান ( ১৯১৭ খ্রি . ) । সেখানে পৌঁছে তিনি কৃষকদের দুর্দশা ও নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেন । এভাবে নীলচাষিদের স্বার্থরক্ষার জন্য ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি যে সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন , তা চম্পারণ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত । এই সত্যাগ্রহের চাপেই সরকার ওই বছরই ‘ চম্পারণ কৃষি বিল ’ পাস করে এবং তিনকাঠিয়া প্রথা তুলে দেয় । 

চম্পারণের গুরুত্ব : 
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে , চম্পারণের আন্দোলনের ফলে কৃষকদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং গান্ধিজির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে । এই আন্দোলনের সাফল্য জাতীয় রাজনীতিতে কৃষকদের গুরুত্ব বৃদ্ধি করে । 

দ্বিতীয় অংশ : খেদা সত্যাগ্রহ : গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকদের নিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি খেদা সত্যাগ্রহ শুরু করেন । এখানকার কৃষকরা ধান ও গমচাষের পাশাপাশি তামাক ও তুলোচাষ করত । ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকদের খাজনা হ্রাসের দাবিতে সরকার সাড়া না দেওয়ায় গান্ধিজি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে মোহনলাল পান্ডা , বল্লভভাই প্যাটেল , ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখ নেতাকে নিয়ে খেদার কৃষকদের একত্রিত করে বয়কট সত্যাগ্রহ শুরু করে । এর ফলে খাজনা দেওয়ার জন্য কৃষকদের ওপর চাপ বন্ধ হয় । 

গুরুত্ব : 
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে , খেদা আন্দোলন একটি আঞ্চলিক আন্দোলন হলেও তা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে চরিত্রগত পরিবর্তন আনে । অধ্যাপিকা জুডিথ ব্রাউনের মতে , মহাত্মা গান্ধি এই আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রামের নিরক্ষর কৃষকের সঙ্গে শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করেছিল । 

১৩. বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ কী? মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?
উত্তরঃ-   
প্রথম অংশ – বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী ঝোঁক প্রবল হয়ে ওঠে।

প্রেক্ষাপট – জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী প্রবণতা বৃদ্ধির কারণগুলি হল —

রুশ বিপ্লবের প্রভাব ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রাধান্য
প্রথম বিশ্বজনিত অর্থনৈতিক মন্দা
শ্রমিক-কৃষক ও সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশায় কংগ্রেস নেতৃত্বের উদাসীনতা ও জাতীয় আন্দোলনের প্রতি মোহভঙ্গ
কমিউনিস্ট কার্যকলাপের প্রভাব
জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর বামপন্থী চিন্তাধারা প্রভৃতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী প্রবণতা বাড়তে থাকে। এমনকি কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও একটি বামপন্থী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে।
বামপন্থী প্রবণতা – ভারতে বামপন্থী প্রবণতার বিভিন্ন দিকগুলি হল —

কমিউনিস্ট পার্টি – ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কমিউনিস্টদের উদ্যোগে কানপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। এই পার্টি শ্রমিক ও কৃষকদের আন্দোলন সংগঠিত করণের মাধ্যমে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল গঠন – কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রবণতাকে সুসংবদ্ধ রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আচার্য নরেন্দ্রদেব, জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পটবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি প্রমুখের নেতৃত্বে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কংগ্রেসের ভিতরে বামপন্থী শক্তিকে সুদৃঢ় করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করা।

কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ – ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় কমিউনিস্টরা প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে পারে নি। তাই পরবর্তীকালে তারা জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মপন্থা গ্রহণ করে।

কৃষক সভা – এই সময় কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান করলে নিখিল ভারত কৃষক সভা ও নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসে কমিউনিস্ট দলের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ভারতে শ্রমিকও কৃষক তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

দ্বিতীয় অংশ – ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩২জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাঁদের বিরুদ্ধে যে মামলা রুজু করা হয়, তা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে খ্যাত।

প্রেক্ষাপট – ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনা, কমিউনিস্ট পার্টি গঠন এবং শ্রমিকশ্রেণির রাজনৈতিক সচেতনতার ফলে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে থেকে শ্রমিক আন্দোলন জঙ্গী চরিত্র ধারণ করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এস. এ. ডাঙ্গে, মিরাজকর প্রমুখ শ্রমিক নেতার নেতৃত্বে বোম্বাই গিরনী কামগার ইউনিয়নের দেড় লক্ষ শ্রমিক ছমাস ব্যাপী বোম্বাই-এর বস্ত্ৰকলে ধর্মঘট চালায়। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে Public Safety Act এবং Trade disputes Act(এপ্রিল ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ) প্রণয়ন করা হল। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিক আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া।

প্রতিক্রিয়া – ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে AITUC-র ঝরিয়া অধিবেশনে এই আইনের তীব্র নিন্দা করা হয়। কলকাতা প্রকাশিত বিশ্বমিত্র পত্রিকা এই বিলটিকে ধিক্কার জানায়, গণবাণী পত্রিকায় লেখা হল, বিলটি শ্রমিকের চিরন্তন দাসত্বের সূচনা করছে।

সৌভাগ্যের গ্রেপ্তার – ১৯২৯ খ্রি: ২০ মার্চ Public Safety Act এবং Trade Disputes Act -এর দ্বারা ৩০ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- মুজাফ্ফর আহমেদ, এস. বি. ঘাটে, এস. এ. ভাঙ্গে, পি. সি. যোশী, মিরাজকর, ধরনী গোস্বামী, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ।

পরিণতি – দীর্ঘ সাড়ে চার বছর মামলা চলার পর মোট ২৭জন বন্দীর বিভিন্ন মেয়াদে অত্যাধিক কঠোর দন্ডাদেশ হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ আগস্ট এই মামলা সমাপ্ত হয়। ব্রিটিশ শ্রমিক দল এই মামলার রায়কে Judicial Scandal বলে নিন্দা করে।


১৪. ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বিবর্তন উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ-  উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মূলত ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের উদ্যোগে ভারতে চা , কফি , নীল , রেল , চটকল , সুতিকল , লৌহ – ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠলে ভারতে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে । উনিশ শতকের শেষে সপ্তাহে একদিন ছুটি , মজুরি বৃদ্ধি , কারখানা আইনের প্রবর্তন প্রভৃতি দাবিকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হত । 

শ্রমিক আন্দোলনের বিবর্তন : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তীকালে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বিবর্তন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে উনিশ 

শতকের ধর্মঘট : হাওড়া রেলস্টেশনে ১২০০ রেল শ্রমিকের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন ( ১৮৬২ খ্রি . ) ছিল ভারতের শিল্প শ্রমিকদের প্রথম ধর্মঘট । ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে নাগপুর এমপ্রেস মিলের শ্রমিক ধর্মঘট এবং ১৮৮২-১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের ২৫ টি ধর্মঘট ছিল খুব উল্লেখযোগ্য । 

স্বদেশি আন্দোলনকালে শ্রমিক ধর্মঘট : বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী বা স্বদেশি আন্দোলন ( ১৯০৫-১৯১১ খ্রি . ) ছিল ভারতে পেশাদারি শ্রমিক আন্দোলনের সময়পর্ব , কারণ— 

বাংলা : বঙ্গভঙ্গের দিন ( ১৬ অক্টোবর , ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ ) হাওড়ার বার্ন কোম্পানির ১২ হাজার শ্রমিক বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করে । এ ছাড়া কলকাতায় ‘ প্রিন্টার্স অ্যান্ড কম্পোপ্রিন্টার্স লিগ ‘ গঠিত হয় , ইস্ট ইন্ডিয়া রেলপথের কর্মীরা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে আন্দোলনে শামিল হয় , বাংলায় পাটকলগুলিতেও ধর্মঘট শুরু হয় । 

তামিলনাড়ু : তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে বাড়তি মজুরির দাবিতে চিদাম্বরম পিল্লাই – এর নেতৃত্বে ধর্মঘট চলাকালীন চিদাম্বরম পিল্লাই গ্রেপ্তার হলে শ্রমিকরা দাঙ্গা বাধায় । 

বোম্বাই : বোম্বাইয়ে কংগ্রেস নেতা বালগঙ্গাধর তিলকের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বস্ত্রকলগুলিতে ধর্মঘট শুরু হয় , পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধ হয় । ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই – এ ৮ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয় । 

অন্যান্য স্থানে কানপুর , আমেদাবাদ , জামালপুরে রেলওয়ে ওয়ার্কশপে ধর্মঘটের দ্বারা শ্রমিকরা আন্দোলনকে সমর্থন জানায় । 

বঙ্গভঙ্গ পরবর্তীকালের শ্রমিক আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গ রদের ( ১৯১১ খ্রি . ) পরবর্তীকালে উল্লেখযোগ্য ধর্মঘট না হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ( ১৯১৪-১৯১৮ ) ভারতে বেশ কিছু শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিল । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল – করাচির নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে কারখানা ( ফেব্রুয়ারি , ১৯১৭ খ্রি . ) , গ্রেট ইন্ডিয়া পেনিনসুলার রেলওয়ের কারখানার ধর্মঘট ( ফেব্রুয়ারি , ১৯১৭ খ্রি . ) , বোম্বাইয়ের ডক শ্রমিকদের ধর্মঘট ( সেপ্টেম্বর , ১৯১৭ খ্রি . ) এবং আমেদাবাদ বস্ত্রশিল্পের ধর্মঘট ( ১৯১৮ খ্রি . ) । ৪ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ধর্মঘট : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে শ্রমিক স্বার্থকে সুরক্ষিত করতে শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বি পি ওয়াদিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘ মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন ‘ ( ১৯১৮ খ্রি . ) । এই বছরের উল্লেখযোগ্য শ্রমিক ধর্মঘট ছিল – কলকাতা পৌরসভা , বোম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্প , খড়গপুর রেল কারখানা , মাদ্রাজের বস্ত্রশিল্প ও লক্ষ্ণৌর রেল কারখানার শ্রমিক ধর্মঘট । 

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ধর্মঘট : ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে ১৯১৯ ও ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের শ্রমিক ধর্মঘট ছিল খুব উল্লেখযোগ্য । ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই বস্ত্র শিল্পের দেড় লক্ষ শ্রমিকের ধর্মঘট এবং মাদ্রাজ , বাংলা , বিহার , আসামের রেল কারখানার বস্ত্রশিল্প ও পাটশিল্পের ধর্মঘট । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতে ধর্মঘটের সংখ্যা ছিল ২০০ । 

সর্বভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন : ১৯১৯ এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অমৃতসর ও গয়া অধিবেশনে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গৃহীত উদ্যোগের ফলশ্রুতি হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন AITUC লালা লাজপত রায় ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতিরূপে জওহরলাল নেহরুর নির্বাচন শ্রমিক আন্দোলনকে কংগ্রেসের কাছাকাছি নিয়ে আসে । 


১৫. কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমাজতন্ত্র প্রসারে জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা আলোচনা করো। গান্ধি-নেহরু বিতর্ক কী?
উত্তরঃ-   
প্রথম অংশ – বিশ শতকের ত্রিশের দশক থেকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। জওহরলাল নেহরু ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার মূল প্রবক্তা। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে তিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলে অভিহিত করেন। গান্ধিজি বলেন, Jawhar is a confirmed socialist.

জওহরলালের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার উৎস – ১৯২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ সফরের সময় নেহরু ইউরোপের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও চিন্তানায়কদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সব্রাসেল – এ অনুষ্ঠিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই ছিল এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের চিন্তাধারাও তাঁকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল।

সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা – ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত কোন পথ নামক প্রবন্ধে জওহরলাল নেহরু শ্রেণি বৈষম্যমুক্ত সমাজগঠনের কথা ব্যক্ত করেন এবং সোভিয়েত সমাজতন্ত্রবাদকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ঘোষণা করেন। তাঁর চিন্তাধারায় আকৃষ্ট হয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একটি বামপন্থী গোষ্ঠীর বিকাশ ঘটতে শুরু করে। যার পরিণতিরূপে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠা। তবে তিনি মনে করতেন ভারতে সমাজতন্ত্র ভারতের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তিনি কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকলেও কোনোদিন এর সদস্যপদ গ্রহণ করেননি।

নেহরু বামপন্থী কার্যধারা – ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌতে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে নেহরু বলেন — এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে বিশ্বের ও ভারতের সমস্ত সমস্যা সমাধানের একমাত্র চাবিকাঠি হল সমাজতন্ত্র। অচ্যুত পটবর্ধন, জয়প্রকাশ নারায়ণ, নরেন্দ্রদেবকে কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করলে নীতি নির্ধারণে বামপন্থী আদর্শের সংযোজন সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তিনি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে নতুন সংবিধান অনুসারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও মন্ত্রীত্ব গ্রহণের বিরোধিতা করেন। কারণ এর ফলে কংগ্রেসের সংগ্রামী ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় অংশ –

গান্ধী-নেহরু বিরোধ – গান্ধিজি নেহরুর মত সমাজতন্ত্রী দলের হাতে জাতীয় কংগ্রেসের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে একদিকে যেমন – নেহরুর সমাজতান্ত্রিক ভাবোচ্ছাস থামিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তেমনি নতুনভাবে গড়ে ওঠা ভারতীয় সমাজতন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর কোনোটিই কার্যকরী হয়নি। বিপরীত ফল দেখে গান্ধিজি সমেত কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতারা বিব্রতবোধ করলেন। কিন্তু দক্ষিণপন্থী নেতারা চুপ করে রইলেন না। রাজেন্দ্র প্রসাদ, কৃপালনী চক্রবর্তী, বল্লভভাই প্যাটেল, রাজাগোপালাচারী প্রমুখ দক্ষিণপন্থী নেতারা একযোগে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন। গান্ধি-নেহরু বিবাদ বহুদিনের–ডোমিনিয়ান স্টাটাসকে কেন্দ্র করে। কিন্তু লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে গান্ধিজির নির্দেশে নেহরুর সভাপতি হওয়া ও বামপন্থী ধ্যান ধারণার আস্ফালন গান্ধিজিকে মোটেই খুশি করতে পারেনি। গান্ধিজি জওহরলালের সমালোচনা করে বলেন, জওহরের পথ আমার পথ নয়। তিনি কার্যত তাঁর কর্মপদ্ধতি অনুমোদন করেন নি। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে শ্রেণি সংগ্রামের বিরোধিতা করবেন বলে ঘোষণা করেন।

নেহরুর আত্মসমর্পণ – বুদ্ধিমান নেহরু বুঝেছিলেন যে, গান্ধিজি কংগ্রেসের প্রাণপুরুষ। বামপন্থী ভাবমূর্তি বজায় রাখার চেয়ে অনেকবেশি জরুরি গান্ধির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেওয়া। গান্ধি আনুগত্য হারানোর পরিণতি রাজনৈতিক অপমৃত্যু। তাই নেহরু না ঝুঁকি নিয়ে অবশেষে গান্ধির কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেন।



Related searches
দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর / ক্লাস 10 ইতিহাস অধ্যায় 1 প্রশ্ন এবং উত্তর / দশম শ্রেণীর প্রশ্ন উত্তর ইতিহাস / দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর তৃতীয় অধ্যায় / দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bis Sotoker Varote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolo / দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর 2023, 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030, 2031, 2032, 2033, 2034, 2035, 2036, 2037, 2038, 2039, 2040 /  দশম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর / দশম শ্রেণীর প্রশ্ন উত্তর ইতিহাস / দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর দশম অধ্যায় / দশম শ্রেণীর ইতিহাস বই pdf / দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর তৃতীয় অধ্যায় / দশম শ্রেণির ইতিহাস বই

  • দশম শ্রেণী ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় : বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon প্রশ্ন উত্তর
  • বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon (ষষ্ঠ অধ্যায়) মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer
  • মাধ্যমিক ইতিহাস | Madhyamik History Question and Answer
  • মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর | Madhyamik History Chapter 6 Question Answer 
  • বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon (ষষ্ঠ অধ্যায়) মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
  • বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon (ষষ্ঠ অধ্যায়) সব প্রশ্ন ও উত্তর
  • মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon - ষষ্ঠ অধ্যায়
  • মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা MCQ প্রশ্ন-উত্তর
  • ইতিহাসের ধারনা (ষষ্ঠ অধ্যায়) | মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন
  • মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় 'বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon' মক টেস্ট
  • মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন - ষষ্ঠ অধ্যায় – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা / Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon
  • Class 10 History Mcq Chapter 6 solution 


Some Information about this article  : 

WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer  | West Bengal West Bengal Class Ten X (Class 10 / WBBSE Madhyamik) History Qustions and Answers with Suggestion | Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Sugession 

দশম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন প্রশ্ন ও উত্তর   
” দশম শ্রেণীর  ইতিহাস – প্রশ্ন উত্তর  “ সমস্ত অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণীর পরীক্ষা (West Bengal Class Ten X  / WB Class 10 / WBBSE Madhyamik  / WBBSE / Class 10 / WBBSE Madhyamik  Exam / West Bengal Board of Secondary Education – WB Class 10 / WBBSE Madhyamik Exam / Class 10 / WBBSE Madhyamik Class 10 / WBBSE Madhyamik / WB Class X / Class 10 / WBBSE Madhyamik Pariksha  ) এখান থেকে প্রশ্ন অবশ্যম্ভাবী । সে কথা মাথায় রেখে Historybd.in এর পক্ষ থেকে দশম শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর (Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion / Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer / Class X History Suggestion / Class 10 / WBBSE Madhyamik Pariksha History Suggestion  / History Class 10 / WBBSE Madhyamik Exam Guide  / Class 10 / WBBSE Madhyamik History MCQ , Short , Descriptive  Type Question and Answer  / Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  FREE PDF Download) উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করা হলাে। ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীদের উপকারেলাগলে, আমাদের প্রয়াস দশম শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষা প্রস্তুতিমূলক সাজেশন এবং প্রশ্ন ও উত্তর (Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion / West Bengal Six X Question and Answer, Suggestion / WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  / Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer  / Class X History Suggestion  / Class 10 / WBBSE Madhyamik Pariksha Suggestion  / Class 10 / WBBSE Madhyamik History Exam Guide  / Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion 2021 , 2022, 2023, 2024, 2025, 2026, 2027, 2028, 2029, 2030, 2021, 2020, 2019, 2017, 2016, 2015, 2031, 2032, 2033, 2034, 2035, 2036, 2037, 2038, 2039, 2040 /  Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  MCQ , Short , Descriptive  Type Question and Answer. / Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  FREE PDF Download) সফল হবে।

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer 

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer Suggestion  দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর।

দশম শ্রেণীর ইতিহাস MCQ প্রশ্ন ও উত্তর

দশম শ্রেণীর ইতিহাস MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | Class 10 / WBBSE Madhyamik History MCQ or Multiple Choice Question and Answer |  দশম শ্রেণীর ইতিহাস MCQ প্রশ্ন উত্তর। 

দশম শ্রেণীর ইতিহাস SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | দশম শ্রেণির ইতিহাস

দশম শ্রেণীর ইতিহাস SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর | Class 10 / WBBSE Madhyamik History Short Question and Answer |  দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর  – SAQ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর।

দশম শ্রেণীর ইতিহাস DTQ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর | ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস

দশম শ্রেণীর ইতিহাস – DTQ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন ও উত্তর | Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর  – DTQ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।

পশ্চিমবঙ্গ দশম শ্রেণির ইতিহাস  – প্রশ্ন উত্তর | West Bengal Madhyamik History Bish Sotoker Bharote Krisok, Sromik O Bamponthi Andolon Question and Answer

দশম শ্রেণীর ইতিহাস (Class 10 / WBBSE Madhyamik History) – প্রশ্ন ও উত্তর | | Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর  – প্রশ্ন উত্তর ।

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর  | ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস | WB Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer, Suggestion

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – | দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – | পশ্চিমবঙ্গ দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – | দশম শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক প্রশ্ন ও উত্তর । WB Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer, Suggestion | 

WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  | WB Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer Notes  | West Bengal WB Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer Suggestion. 


দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer, Suggestion 

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion. দশম শ্রেণীর ইতিহাস সহায়ক প্রশ্ন ও উত্তর । Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer, Suggestion.

Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer Suggestions  | দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর 

Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer  দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর  Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর – MCQ, সংক্ষিপ্ত, রোচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর  । 

WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  | দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর 

WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর । WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion  দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর।

West Bengal Class 10 / WBBSE Madhyamik  History Suggestion  Download. WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History short question suggestion  . Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion   download. Class 10 / WBBSE Madhyamik Question Paper  History. WB Class 10 / WBBSE Madhyamik  History suggestion and important question and answer. Class 10 / WBBSE Madhyamik Suggestion pdf.

পশ্চিমবঙ্গ দশম শ্রেণীর  ইতিহাস পরীক্ষার সম্ভাব্য সাজেশন ও শেষ মুহূর্তের প্রশ্ন ও উত্তর ডাউনলোড। দশম শ্রেণীর ইতিহাস পরীক্ষার জন্য সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর।

Get the WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer by Historybd.in

WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer prepared by expert subject teachers. WB Class 10 / WBBSE Madhyamik  History Suggestion with 100% Common in the Examination .

Class 10 / WBBSE Madhyamik History Syllabus

West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class 10 / WBBSE Madhyamik History Syllabus with all the important chapters and marks distribution. Download the Class 10 / WBBSE Madhyamik History Syllabus and Question Paper. Questions on the History exam will come from these chapters. All the chapters are equally important, so read them carefully.

WB Class 10 / WBBSE Madhyamik History Syllabus Free Download Link Click Here 

Class 10 / WBBSE Madhyamik Ten X History Suggestion | West Bengal WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik Exam 
Class 10 / WBBSE Madhyamik History Question and Answer, Suggestion Download PDF: WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik Ten X History Suggestion  is proXded here. West Bengal Class 10 / WBBSE Madhyamik History Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free has been given below. 

দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | WBBSE Class 10 / WBBSE Madhyamik History 

আশাকরি তোমাদের দশম ক্লাসের বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায় থেকে সকল প্রশ্ন ও উত্তর কমপ্লিট হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বাঙ্গীণ প্রচেষ্টা করেছি তোমাদের এই দশম শ্রেণীর বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায় থেকে সব প্রশ্ন উত্তর দেওয়ার জন্য, এখন কাজ হল তোমাদের বাড়িতে পড়ার । পড়তে থাকো , প্র্যাকটিস করতে থাকো, প্র্যাকটিস মানুষকে উত্তম করে তোলে। যত পড়বে তত শিখবে, ততই জ্ঞানী হবে। 

তোমাদের দশম ক্লাসের  বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের প্রাকটিসের জন্য আমাদের কুইজে অংশগ্রহণ করতে পারো, সম্পূর্ণ ফ্রিতে, নিচে লিঙ্ক দেওয়া আছে কুইজে অংশ নিতে পারো।

ক্লাস দশম এর অন্যান্য অধ্যায় গুলি সম্পর্কে আরও পড়তে চাইলে নিচে অধ্যায় অনুযায়ী লিঙ্ক দেওয়া আছে, লিঙ্কে ক্লিক করে ক্লাস দশম এর অন্য অধ্যায় গুলি পড়ে নাও। আমাদের পরিসেবা তোমাদের ভালো লাগলে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারো।

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Below Post Ad