Type Here to Get Search Results !

বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর । একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, । Class 11, 2nd semester Bengali,

WB..Note 0

একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার,  বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 1st semester Bengali,  । WBCHSE । Boi kena - Soyed Mujtaba Ali

শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের  বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী নিয়ে। আশাকরি তোমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের এই বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী অধ্যায়টি থেকে যেসব প্রশ্ন দেওয়া আছে তা কমন পেয়ে যাবে। আমরা এখানে একাদশ শ্রেণীর, দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা বিষয়ের  বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী এর SAQ, শূন্যস্থান পূরণ, এক কথায় উত্তর দাও, Descriptive, ব্যাখ্যা মুলক প্রশ্নোত্তর , সংক্ষিপ্ত নোট এগুলি দিয়েছি। এর পরেও তোমাদের এই বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী অধ্যায়টি থেকে কোন অসুবিধা থাকলে, তোমরা আমাদের টেলিগ্রাম, হোয়াটসাপ , ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারো । 
বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর । একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার,  । Class 11, 2nd semester Bengali,

বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর 
অনধিক একশো পঞ্চাশ শব্দে উত্তর দাও।
প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫

প্রশ্ন ১ 

 "তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র।"-চক্রটি কী ও চক্রটি অচ্ছেদ্য কেন? এটি ভাঙবার উপায় কী?

২+৩=৫

উত্তর:- 
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে অচ্ছেদ্য চক্র হল বই সস্তা নয় বলে লোকে কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা হয় না।

আসল কথা হল বাঙালির বই কেনার প্রবণতা কমে গেছে। তার ফলে বই বিক্রি হচ্ছে কম। কম বিক্রি হলে স্বাভাবিকভাবে বইয়ের দাম বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত লাভ না হলে প্রকাশকের সংসার চলবে না। এসব কারণেই কম পয়সায় ভালো বই সরবরাহের ঝুঁকি প্রকাশকেরা নিতে পারেন না। বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গেলে দেউলে হওয়ার ঝুঁকিও আছে। তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র ভাঙা যায় না।

◇ এই অচ্ছেদ্য চক্র ছিন্ন করতে গেলে বই-এর প্রকাশক তথা বিক্রেতা এবং পাঠক তথা পুস্তক ক্রেতা-উভয় পক্ষকেই ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বাঙালি ক্রেতার একটা চিরকালের বদনাম-বাঙালিরা বই নিজের পয়সায় কিনে পড়ে না। পাঠ্যপুস্তক ছাড়া লাইব্রেরি থেকে পাওয়া বই-ই বা উপহার পাওয়া বই পড়ে। আর প্রকাশকের পক্ষে সস্তায় বই প্রকাশ করা কঠিন, কারণ এটা দিয়ে তাঁর পেটের ভাত জোগাড় হয়। সেই জন্য তিনি দেউলে হওয়ার ভয়ে ওই ঝুঁকিটা নেন না। তাই লেখকের মতে মূলত ক্রেতাকে এগিয়ে আসতে হবে এই চক্র ছিন্ন করতে। যত বেশি বই বাঙালি কিনবে ততই প্রকাশকের পক্ষে দাম কমানোও সম্ভব হবে।

প্রশ্ন ২ 

 "সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে,"-
উপায়টি সংক্ষেপে লেখো। 
অথবা, 
"চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি?"- পন্থাটি সংক্ষেপে লেখো।


উত্তর:-
 বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধে বিখ্যাত ব্রিটিশ গণিতবিদ ও দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের উক্তি উদ্ধার করে কথাটি বলেছেন। তিনি বলেছেন-সংসারে জ্বালা- যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার মধ্যে ডুব দেওয়া। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারবে, সে তত বেশি যন্ত্রণা এড়িয়ে যাওয়ার দক্ষতা অর্জন করবে। এই ভুবন সৃষ্টি কেবল সাহিত্য অনুশীলনের মাধ্যমেই নয়, দর্শন বা ইতিহাস বা প্রয়োজনে আরও অন্যান্য গ্রন্থ কিনে পড়ার মাধ্যমেও অর্জিত হয়। তার কারণ সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি বিষয় এক-একটি দিকের মনের চোখ ফোটায়। বই কিনে পড়ে মনের চোখ বাড়াতে তো হবেই, কিন্তু তারও একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। বই পড়ে যদি মনের ভুবন সৃষ্টি করতে হয় তাহলে সেই বিষয়ের ভিতরে প্রবেশ করা আবশ্যক। আর তা হলেই সাংসারিক নানাবিধ জ্বালা-যন্ত্রণা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এই সূত্রেই বলা যায়, এই সব বিষয় ছাড়াও বিজ্ঞান, ভ্রমণসাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ের মতো গ্রন্থে যদি নিমগ্ন থাকা যায় তাহলে বাহ্যিক জ্বালা- যন্ত্রণা কেবল এড়িয়ে যাওয়া যাবে তাই নয়, সমাধানও করা যাবে।


প্রশ্ন ৩

"আপনারা পারেন না কেন?"-এখানে কী না পারার কথা বলা হয়েছে এবং কেন? ৫


উত্তর:- 
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে বাঙালি প্রকাশকদের কম টাকায় ভালো বই প্রকাশ করতে না পারার কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধের আগে যেখানে চৌদ্দ আনা বা বড়োজোর পাঁচ সিকে দিয়ে ভালো বই মিলত, এখন সেটা মিলছে না কেন, তা-ই লেখকের আলোচনার বিষয়।

এর কারণ হিসেবে লেখক বলছেন যে, কোনো ফরাসি প্রকাশক ভালো বই এক ঝটকায় কুড়ি হাজার কপি ছাপতে পারেন। কিন্তু বাঙালি প্রকাশক মাত্র দু-হাজার কপি ছাপতে গেলেই বিক্রি না হওয়ার ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। আর বই যথেষ্ট বিক্রি না হলে দামও কমানো সম্ভব হয় না। তাই বেশি দামের বই বাঙালি প্রকাশকের পক্ষে একসঙ্গে অনেক বেশি কপি ছাপানো সম্ভব হয় না। কারণ এতেই তার সংসার চলে। অথচ লক্ষ করার মতো বিষয় হল-এই পৃথিবীতে ফরাসি ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের চেয়ে অনেক কম। তা সত্ত্বেও তারা এক সঙ্গে কুড়ি হাজার কপি বই ছাপাতে দ্বিধা করে না। কারণ বিশ্বের বাজারে তাদের বইয়ের চাহিদা আছে, বিক্রিও আছে। তাই ফরাসি প্রকাশকেরা এত পরিমাণে বই ছাপাবার ঝুঁকি নিতে পারেন, কিন্তু বাঙালি প্রকাশকেরা পারে না। কারণ দু'হাজার কপি ছাপালে তা ঠিকঠাক বিক্রি হবে কি না সে-বিষয়ে যথেষ্ট তারা সন্দিহান থাকেন।


প্রশ্ন ৪

"বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয়নি।"- লেখকের এ কথা বলার কারণ কী? ৫


উত্তর:- 
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে এক চিরন্তন সত্য প্রকাশিত হয়েছে। সেটি এই যে-বই কিনে কেউ কখনও দেউলে হয় না। বইয়ের দাম যদি বেশিও হয় তাহলেও দেউলে বা দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, বই কিনে বই পড়লে ফ্রাঁসের মতে অনেকগুলি মনের তথা জ্ঞানের চোখের অধিকারী হওয়া যাবে, যার জন্য এই সুন্দর ধরাতলকে একসঙ্গে প্রত্যক্ষ করা যায়। আবার রাসেলের মতে বই পড়লে মনের মধ্যে একগাদা নতুন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলা যাবে, যাতে সংসারের জ্বালা-যন্ত্রণা গ্রাস করতে উদ্যত হলে ওই ভুবনের মধ্যে বসে থেকে বা ডুব দিয়ে মুক্তি পাওয়া যাবে। আসলে বাঙালিসমাজে এক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। পড়ার বই মানেই পাঠ্যপুস্তক। এই বই পড়লেই বুঝিবা জীবনে চাকরি পাওয়া বা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সবই সম্ভব। কিন্তু জীবনকে আরও সুন্দর, আরও মসৃণ করে তুলতে গেলে এগুলির বাইরে আরও নানাবিধ বই পড়া দরকার। কিন্তু এই সমস্ত বই পড়লে মাছির যে রকম মাথার চতুর্দিকে চোখ থাকে তেমনি অসংখ্য মনের চোখ সৃষ্টি করা যায়, যার দ্বারা জীবনের অনেক গভীরতল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা অর্জিত হয়। এ ছাড়া জীবনের দুঃখ অতিক্রমী আপন-একেবারে নিজস্ব ভুবনের সৃষ্টিকর্তা হওয়া যায় বলেই কখনোই দেউলে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


প্রশ্ন ৫ 

"এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি প্রকারে?"-ভুবন কেন সৃষ্টি করা দরকার? এই ভুবন কেমন করে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব?


২+৩=৫

উত্তরঃ- 
 প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে বারট্রান্ড রাসেলের মত অনুযায়ী নিজের নিজের মনের ভিতর প্রত্যেকেরই আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া প্রয়োজন। এর কারণ সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণার সম্মুখীন হলে ওই ভুবনের মধ্যে ডুব দিলে শান্তি পাওয়া যায়।

এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করার প্রধান দুটি উপায় হল বই পড়া এবং দেশ ভ্রমণ করা। দেশ ভ্রমণ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্য সকলের থাকে না বলেই লেখক বই পড়ার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ কারণেই লেখক বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়াম বেহেস্তের সরঞ্জামের ফিরিস্তি বানাতে গিয়ে যে বইয়ের কথা ভোলেননি-সেই তথ্যের উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গে লেখক বই পড়ার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আরও বলেছেন যে, রুটি, মদ একদিন ফুরিয়ে যাবে। অর্থাৎ ক্ষুধার অন্ন বা মনোরঞ্জনের রঙিন উপাদান ব্যবহার করতে করতে একসময় ক্লিশে হয়ে যাবে। প্রিয়ার কাজল কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের মদিরা ফিকে হয়ে যাবে, কিন্তু বই থেকে যাবে অনন্ত-যৌবনা হয়ে। কারণ বই ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। কোনো ভালো বই বারবার পড়া যায়, কারণ বারবার তা নতুন নতুন রূপে ধরা দেয়। তাই রুটি-মদ-প্রিয়ার মতো ক্ষণস্থায়ী আনন্দ উপাদান নয়, বইয়ের মতো চিরস্থায়ী বন্ধু নিয়ে মনের ভুবন তৈরি করা শ্রেয়।


প্রশ্ন ৬ 

"এরকম অদ্ভুত সংমিশ্রণ আমি ভূ-ভারতের কোথা দেখিনি।”-এখানে কোন্ সংমিশ্রণের কথা বলা হয়েছে? এ কথা উল্লেখের তাৎপর্য কোথায়?


২+৩=৫

উত্তর:-
বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে বাঙালির এক অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। বাঙালির জ্ঞানতৃষ্ণা তথা জানার ইচ্ছা প্রবল, কিন্তু বই কেনার বেলা সে প্রচণ্ড রকম অনীহ। সাধারণত যার যে বিষয়ে জ্ঞানতৃষ্ণা বা জানবার পিপাসা প্রবল থাকবে, সে-বিষয়কে অন্য বিষয় অপেক্ষা গুরুত্ব দেবে। এখানে প্রবল ইচ্ছা ও প্রচণ্ড অনীহা-এমন বৈপরীত্যময় অদ্ভুত সংমিশ্রণের কথা বলা হয়েছে।

◇ যার জ্ঞানতৃষ্ণা প্রবল থাকে, তার প্রচুর বই কেনার আগ্রহ থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাঙালির ক্ষেত্রে ঠিক তার উলটো। এ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিকের বক্তব্য অনেক বেশরমের | মতে বাঙালির পয়সার অভাব। অথচ বাঙালি পয়সা খরচ করে খেলা দেখবে বা সিনেমা দেখবে-তার বেলা পয়সা থাকে, কিন্তু বই কেনার বেলায় নয়। আসলে প্রাবন্ধিক ব্যঙ্গের কশাঘাতে বাঙালিকে বই কেনার ক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করেছেন। বইবিমুখ বাঙালিকে কীভাবে বইমুখী করে তোলা যায়, তার নানাবিধ প্রয়াস লেখক এই প্রবন্ধের সর্বত্র করে গিয়েছেন। কখনও বিদেশি সাহিত্যপ্রেমীদের উদাহরণ দিয়ে, আবার কখনও-বা বাঙালিকে সম্মানে আঘাত দিয়ে। মনোরঞ্জনের বা প্রমোদ বিলাসের নানা ক্ষেত্রে খরচ করার সামর্থ্য বা ইচ্ছা থাকলেও বইকেনার ইচ্ছা না থাকাটা অন্যায় বলেই মনে করেন লেখক।

প্রশ্ন ৭ 

"অতএব সপ্রমাণ হল জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।”-কে প্রমাণ করলেন? কীভাবে এই চিরসত্য প্রমাণিত হল?


২+৩=৫

উত্তরঃ- 
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে এক আরব পণ্ডিত প্রমাণ করলেন যে, জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।

◇ পণ্ডিত বলছেন যে, ধনীরা মনে করে ধন-সম্পদ উপার্জন করা তথা পয়সা কামানো এই দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কর্ম। আবার অন্যদিকে, জ্ঞানীরা বলছেন, জ্ঞানার্জনই দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কাজ। আরব পণ্ডিতের মতে ধনীর প্রচুর মেহনতের ফসল হল ধন-সম্পদ-টাকাকড়ি। এই টাকাপয়সা যদি কেউ জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয়, তাহলে তিনি ধনীদের চেয়ে ঢের উত্তম পদ্ধতিতে খরচ করতে পারেন।

ধনীরা কেবলই কোথা থেকে কীভাবে দু-পয়সা উপার্জন করবে সেই চিন্তায় মশগুল থাকে। আর অন্যপক্ষে জ্ঞানীরা বিভোর থাকেন জ্ঞান অর্জন তথা বই-পড়ার মধ্যে ধনীরা যদি তাদের কষ্ট করে উপার্জিত টাকা এই জ্ঞানী মানুষদের হাতে তুলে দেয় ভালো কাজে লিপ্ত থাকার জন্য, তাহলে জ্ঞানীরা বিশ্ববিখ্যাত ভালো ভালো নির্বাচিত বই কেনা ও বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন তো বটেই, তার মাধ্যমে সমাজকল্যাণের উৎকৃষ্ট ভাবনা ভাববার শক্তিটুকুও অর্জন করতে পারেন। এর ফল ধনী, জ্ঞানী, দরিদ্র, মূর্খ- সবাই ভোগ করতে পারেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাতেও জ্ঞানের বাহক হিসেবে বই কেনার হিড়িক পড়বে।



প্রশ্ন ৮ 

 "আমার জনৈক বন্ধু একটি গল্প বললেন।"-গল্পটি সংক্ষেপে উল্লেখ করে এটি বলার উদ্দেশ্য কী লেখো। ৫ 


উত্তর:-
 'বই কেনা' প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালিদের 'বই কেনার' ক্ষেত্রে প্রবল অনীহা লক্ষ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর বন্ধুর বলা একটি গল্পের কথা বলেছেন। এক ড্রইংরুম-বিহারিণী গৃহবধূ বাজারে স্বামীর জন্য জন্মদিনের উপহার কিনতে গেলেন। প্রায় সমস্ত রকম জিনিস নাড়াচাড়া করে দেখলেন, সবই তাঁর স্বামীর সংগ্রহে আছে। তখন দোকানদার একটি ভালো বই নেওয়ার পরামর্শ দিলে তিনি বলেন যে, তাও একটি আছে তাঁর। আসলে ধনীলোকের বিলাসিনি গৃহবধূর কাছে প্রতি বছর নতুন নতুন উপহার দেওয়াটাই প্রাধান্য পায়। বাহ্য চোখের সুখদানকারী মনোরঞ্জক নানা উপাদানের কাছে তাদের বই হল একটি গৌণ বিষয়মাত্র। তাই দোকানদার একটি ভালো বই উপহার দেওয়ার কথা বললে ওই ড্রইংরুম বিহারিণীর নাক কুঁচকে যায়।

এই গল্প উল্লেখের উদ্দেশ্য হল-প্রকৃত মানুষ যেখানে জ্ঞানের বাহন পুস্তক জোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থব্যয় করে সেখানে বাঙালির ঘরে অন্যান্য সামগ্রী অনেক থাকলেও বইমাত্র একটি এবং তা-ই তাদের কাছে যথেষ্ট। এটি বাঙালির বইকেনার আগ্রহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্যই বলা। তারা পারতপক্ষে জ্ঞানার্জনের জন্য অথবা ভালো লাগার জন্যও বই কেনে না। অথচ বই পড়লে যে মনের চোখ বাড়ানো যায় বা মনের মধ্যে জ্বালা-যন্ত্রণা উপশমকারী অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করা যায়, তা তারা আসলে জানেই না।

প্রশ্ন ৯ 

 "তিনি স্থির করলেন, এদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।"- কে, কাদের শিক্ষা স্থির করলেন? তিনি কী শিক্ষা দিয়েছিলেন। [সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন]


২+৩=৫

উত্তর:- 
বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে 'তিনি' হলেন বিখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক আঁদ্রে জিদ তাঁর নিজের বন্ধুদের শিক্ষা দেওয়ার কথা মনস্থির করেছিলেন।

জিদ রাশিয়া থেকে ফিরে এসে সোভিয়েট রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি প্রাণঘাতী লেখা ছাড়েন। প্যারিসের স্থালিনীয়ারা তখন গালিগালাজ আর কটুকাটব্য করে জিদের প্রাণ অতিষ্ঠ করে তুললেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই সময় তাঁর বন্ধুরা অধিকাংশই চুপ করে থাকলেন, জিদের হয়ে কথা বললেন না। বিষয়টি আঁদ্রে জিদের 'জিগরে' লাগল অর্থাৎ মনে লাগল। তিনি মানসিকভাবে আহত হলেন। আর তখনই তিনি মনস্থির করলেন যে এই সমস্ত চুপ করে থাকা বন্ধুদের শিক্ষা দিতে হবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। কাগজে বিজ্ঞাপন দিলেন, তাঁর নিজের লাইব্রেরিখানা তিনি নিলামে বেচে দেবেন। প্রথমে সমগ্র প্যারিসবাসী খবরটি শোনামাত্র বিশ্বাস করেনি। কিন্তু পরে সবাই দিকে দৌড়ে গিয়ে যারপরনাই বিস্মিত হল। দেখা গেল, সেইসব বই-ই জিদ নিলামে চড়িয়েছেন, যেগুলি তাঁর চুপ থাকা বন্ধুরা জিদকে স্বাক্ষরসহ উপহার দিয়েছিলেন। জিদের মতে তিনি জঞ্জাল বেচে ফেলেছেন। অপমানিত বন্ধুরা দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম দিয়ে তড়িঘড়ি লোক পাঠিয়ে সেগুলিকে কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এরকম শিক্ষা পেয়ে জিদকে তাঁদের ক্ষমা করার কথা নয়। 


প্রশ্ন ১০ 

 "এই বই জিনিসটার প্রকৃত সম্মান করতে জানে ফ্রান্স।" 
-ফ্রান্স কীভাবে সম্মান করে তা সংক্ষেপে লেখো। ৫


উত্তর:- 
বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে ফ্রান্স যে বইয়ের প্রকৃত সমঝদার, সে-কথা 'বই কেনা' প্রবন্ধে বলেছেন। ফ্রান্সের প্রকাশকরা একসঙ্গে দু হাজার কপি বই ছাপালেও দেউলে হয়ে যায় না। কারণ ফ্রান্সের মানুষ বই পড়েন। এর পাশাপাশি কাউকে মারাত্মক মোক্ষম অপমান করতে হলেও ফরাসিরা বই দিয়েই করেন। ধরা যাক, কারোর সবচেয়ে ভক্তি-ভালোবাসা দেশের জন্য। তখন ফরাসিরা সেই ব্যক্তিকে অপমান করার বদলে তার দেশকে বেইজ্জত করে যদি একখানা বই লিখে দেয় তাহলে সেই ব্যক্তি নিজের অপমান একদিন সয়ে যাবেন কিন্তু দেশের অপমানের জ্বালায় দংশিত হতে থাকবেন বহুদিন। আসলে ফ্রান্সের বইয়ের কদর বিশ্বজুড়ে। সারা বিশ্বে যাঁদের ব্যাবসা এবং বইয়ের চাহিদা, তাঁরা একসঙ্গে দু-হাজারের জায়গায় দশ-বিশ হাজার কপি ছাপানোর ঝুঁকি নিতে পারেন। পাশাপাশি তাঁরা বহু যত্ন করে বইয়ের গুণগত মান ঠিক রেখে পাঠকের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। তাঁরা বই নামক জ্ঞানভাণ্ডারের প্রকৃত সমঝদারও বটে। তাই এই বইকেই আবার অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করেন। প্রকৃত দেশপ্রেমীর কাছে নিজের ব্যক্তিজীবনের চেয়ে স্বদেশের আবেগ মারাত্মকরূপে কাজ করে। তাই সেই ব্যক্তিকে সরাসরি আক্রমণ না করে তার স্বদেশের প্রতি অপমান করে বই লিখে বাজারে ছেড়ে দিলে সেই ব্যক্তিকে শত গুণ বেশি বেইজ্জত করা যাবে বলে লেখক মনে করেন।


প্রশ্ন ১১ 

"পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন।”— কী স্বীকার করে নিয়েছেন? তা স্বীকার করা কতটা যুক্তিযুক্ত?
২+৩=৫


উত্তর:- 
বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধের শুরুতেই বলেছেন-পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, মাছি ধরা অত্যন্ত শক্ত। মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যাওয়া হোক না কেন, সে উড়ে যাবেই।

◇ এই বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, মাছির আমাদের মতো দুটি চোখ নিয়ে কারবার নয়। মাছির মাথাজুড়ে আছে গাদা গাদা চোখ। আমরা যেখানে কেবল সামনের দিকে দেখতে পাই, সেখানে মাছি একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়। তাই যেদিক দিয়েই মাছি ধরতে যাওয়া হোক না কেন, সে আগে থেকে দেখতে পেয়ে উড়ে যায় একই সঙ্গে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পাওয়ার সুবিধা তো আছেই তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাছির ক্ষিপ্রতা। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তারা উড়ে যেতে পারে বলেই তারা আমাদের ধরবার আগেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই বিষয়ে জ্ঞানী ও গুণী আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, তাঁর মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকত, তাহলে তিনি এই আচক্রবালবিস্তৃত সুন্দরী পৃথিবীর সৌন্দর্যের সম্পূর্ণ অংশ একই সঙ্গে দেখতে পেতেন। সুতরাং কেবল মাছি ধরার বিষয়টাই নয়, একই সঙ্গে সৌন্দর্য উপভোগ করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ১২ 

"গল্পটা সকলেই জানেন।”-গল্পটি কী? গল্পটি উল্লেখের কারণ কী? ৩+২=৫


উত্তর:-
বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে উল্লেখিত গল্পটি একজন হেকিম আর এক রাজার গল্প। হেকিমের একখানা বই রাজা কিছুতেই বাগাতে পারছিলেন না বলে হেকিমকে খুন করে বই হস্তগত করে পড়তে থাকলেন। রাজা বারবার থুতু দিয়ে পাতা উলটে পড়ছেন। গল্পের শেষ পাতায় যখন তিনি জানতে পারলেন যে, হেকিম আগাম হত্যার কথা আশঙ্কা প্রতিশোধস্পৃহায় প্রত্যেক পাতার কোনায় বিষ মাখিয়ে রেখেছেন, তখন রাজা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।

◇ গল্পটি উল্লেখের কারণ হল-প্রাবন্ধিক ব্যঙ্গ করে বলেছেন যে, বাঙালি বোধহয় গল্পটা জানে। তাই ভয়ে বই কিনে আর বই পড়ে না। হয়তো কেবলই ভাবে, কেউ যদি ওই হেকিমের মতো বইয়ের পাতার কোনায় কোনায় বিষ মিশিয়ে রাখে! মৃত্যুভয় বড়ো ভয়। জীবন বড়ো বলাই। এমনিতেই বাঙালি বই কিনে পড়তে প্রচণ্ড রকমের অপরাগ। তাই লেখক বিদ্রুপের কশাঘাতে জর্জরিত করে বাঙালিকে বইমুখী করার চেষ্টা করছেন আপ্রাণ। আসলে গল্পটি একটি প্রতীকী। হেকিম মারা গিয়েছেন এবং মেরে দিয়েছেন রাজাকে। ভরকেন্দ্রে আছে বই। বিষ প্রয়োগে মৃত্যুর কথা বাঙালিকে যেমন বইবিমুখ করবে না, তেমনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা হল স্বাভাবিকভাবে বাঙালিকে বইপ্রেমী হয়ে উঠতে হবে।


 
প্রশ্ন  ১৩ 

"কথাটা যে খাঁটি, সে কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায়।”- কোন্ কথাটার কথা বলা হয়েছে? এর মধ্যে যে আপশোশ ছিল তা কাটাবার উপায় কী? ২+৩=৫


উত্তর:- 
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর 'পঞ্চতন্ত্র' নামক গ্রন্থের অন্তর্গত 'বই কেনা' প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতাংশে খাঁটি কথাটা হল-ফাঁস বলেছেন যে, মাছির মতো আমাদেরও যদি মাথার চতুর্দিকে চোখ বসানো থাকত তাহলে আমরাও আচক্রবালবিস্তৃত সুন্দরী পৃথিবীর রূপসৌন্দর্য সম্পূর্ণটা একসঙ্গে দেখতে পেতাম।

এই কথার মধ্যে থাকা আপশোশটি আনাতোল ফ্রাঁসের কথাতেই আবার মিটে যায়। তিনি বলেছেন যে, আমাদের মনের চোখ বাড়াতে হবে। আমরা যত বই পড়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভ্যস্ত হব, তত আমাদের মনের চোখকে বাড়াতে পারব। আর তাহলেই আমাদের মাছি না হওয়ার আপশোশ কাটবে। এই প্রসঙ্গে লেখক আরও জানিয়েছেন যে, আমরা অর্থাৎ বাঙালিরা এই মনের চোখ বাড়াবার ক্ষেত্রে বড্ড অলস। পৃথিবীর আর সব সভ্য জাতি যেখানে মনের চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, সেখানে আমরা কেবলই আরব্য উপন্যাসের এক-চোখা দৈত্যের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে চলি। আবার মনের চোখের সংখ্যা বাড়াতে বললে আমরা চোখ রাঙাই। যারপরনাই বিরক্তি প্রকাশ করি। আসলে পড়তে গেলে তো পর্যাপ্ত পরিমাণে বই কিনতে হবে। কেবল উপহারে পাওয়া বই পড়ে তো আর মনের চোখ বাড়বে না। তার জন্য পয়সা খরচ করে বই কিনতে হবে।


  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা  প্রশ্ন উত্তর
  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার  SAQ
  • একাদশ শ্রেণীর বাংলা নতুন সিলেবাস দ্বিতীয় সেমিস্টার 
  • ক্লাস 11 বাংলা  প্রশ্ন উত্তর
  • Class 11 Bengali New syllabus in bengali west bengal board
  • Class 11 2nd semester Bengali New syllabus WB


একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, , বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 2nd semester,  Boi kena - Soyed Mujtaba Ali Questions and Answers | Class XI, Semester II, Bengali,  Questions and Answers 



Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad

Show ad in Posts/Pages