একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার, ষষ্ঠ অধ্যায় আগুন (নাটক) - বিজন ভট্টাচার্য প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 1st semester Bengali, Sixth Chapter । WBCHSE । Agun (Natok) - Bijon Bhattachariya
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় আগুন (নাটক) - বিজন ভট্টাচার্য নিয়ে। আশাকরি তোমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের এই আগুন (নাটক) - বিজন ভট্টাচার্য অধ্যায়টি থেকে যেসব প্রশ্ন দেওয়া আছে তা কমন পেয়ে যাবে। আমরা এখানে একাদশ শ্রেণীর, দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা বিষয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় আগুন (নাটক) - বিজন ভট্টাচার্য এর SAQ, শূন্যস্থান পূরণ, এক কথায় উত্তর দাও, Descriptive, ব্যাখ্যা মুলক প্রশ্নোত্তর , সংক্ষিপ্ত নোট এগুলি দিয়েছি। এর পরেও তোমাদের এই আগুন (নাটক) - বিজন ভট্টাচার্য অধ্যায়টি থেকে কোন অসুবিধা থাকলে, তোমরা আমাদের টেলিগ্রাম, হোয়াটসাপ , ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারো ।
আগুন - বিজন ভট্টাচার্য অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তরঅনধিক ১৫০ শব্দে উত্তর:- দাও। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫
প্রশ্ন ১
"দেখ বাপু, আজ আবার একটু কষ্ট কর।"- কে, কাকে এ কথা বলেছে? কষ্টটা কীসের এবং আবার একটু কষ্ট করতে বলার পিছনে বক্তার কী ধরনের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে? ২+৩=৫
উত্তর:-
■ উৎস:
আলোচ্য সংলাপটি বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটক থেকে চয়ন করা হয়েছে।
■ বক্তা-শ্রোতা:
নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের গিন্নি মনোরমা তার স্বামী পেশায় কেরানি হরেকৃষ্ণবাবুকে এ কথা বলেছে।
■ কষ্টের কারণ:
সময়টা খাদ্যসংকটের, খোলা বাজারে যথার্থ দামে খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানি তথা ইংরেজ সরকার রেশনের মাধ্যমে প্রতিদিন সামান্য পরিমাণের চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ফলে ভোর থেকেই রেশন দোকানের সামনে লাইন পড়ছে লম্বা হয়ে। প্রতিদিন ভোর ভোর উঠে সামান্য পরিমাণ চাল পাওয়ার জন্যে লাইন দেওয়া শুধু কষ্টকরই নয়, অত্যন্ত বিরক্তিকর। হরেকৃষ্ণবাবু এই আকালের পরিস্থিতিতে তাই অধৈর্য হয়ে স্ত্রী মনোরমার কাছে মন্তব্য করেন- "চা নেই, চিনি নেই, চাল নেই, খালি আছে চুলোটা। তাও আবার কয়লার অভাব।"
■ বক্তার মনোভাব:
পরিস্থিতি চাপে হরেকৃষ্ণবাবু অধৈর্য, অস্থির হলেও তার স্ত্রী মনোরমা কিন্তু যথেষ্ট ধৈর্যশীলা ও আশাবাদী। তিনি স্বামীকেও আর একটু ধৈর্য ধরতে বলেন। বলেন আজ আবার একটু কষ্ট করে চাল সংগ্রহের লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে। কারণ ভোঁদার কাছে তিনি শুনেছেন, আজ নাকি দু-সের করে চাল দেবে। এই নাটকে হরেকৃষ্ণ এবং মনোরমার চরিত্রের বিপরীতধর্মী মনোভাবকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন নাট্যকার।
প্রশ্ন ২
'আগুন' নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে হরেকৃষ্ণ ও মনোরমার সংলাপের মধ্য দিয়ে যে ছবিটি ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় লেখো। [সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন ৫
উত্তর:-
অসহনীয় খাদ্যসংকটের আবহে লেখা নাটক বিজন ভট্টাচার্যের 'আগুন'।
■ মধ্যবিত্ত সংসারের পরিবেশ :
'আগুন' নাটকের চতুর্থ দৃশ্যটির সময় সকালের দিকে, একটা মধ্যবিত্ত পরিবার, তুলনামূলকভাবে একটু পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ পরিবেশ। পেশায় কেরানি হরেকৃষ্ণবাবুর পরিবার। তিনি তাঁর স্ত্রী মনোরমার সঙ্গে কথা বলছেন।
■ সংলাপের মাধ্যমে খাদ্য সংকটের প্রকাশ:
দৃশ্যটির প্রায় শুরুতেই হরেকৃষ্ণবাবুর সংলাপে প্রত্যক্ষ-ভাবে ধরা পড়েছে খাদ্যসংকটের মর্মান্তিক চেহারাটা- "চা নেই, চিনি নেই, চাল নেই, খালি আছে চুলোটা।” তবুও তাঁর স্ত্রী তাঁকে চাল সংগ্রহের লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে উৎসাহ দেয়। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। চাল সংগ্রহের জন্যে লাইনে দাঁড়ালে তা পেতে পেতে বারোটা বেজে যাবে, এদিকে দশটার মধ্যে অফিসে পৌঁছতেই হবে, উভয়সংকট। অফিসের ম্যানেজার ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা আবার তাদের জন্যে বরাদ্দ চাল থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে কালোবাজারে চড়া দামে সেই চালই বেচে দিচ্ছে। এ সব জেনেও মনোরমা আশাবাদী হয়ে স্বামীকে ঠাকুর নমস্কার করে বেরিয়ে পড়তে বলে।
■ অসহায়তার ছবি:
হরেকৃষ্ণবাবু এবং তাঁর স্ত্রী মনোরমার সংলাপের মধ্য দিয়ে 'আগুন' নাটকের মূল প্রতিপাদ্য খাদ্য সংকট যেমন উঠে এসেছে, তেমনই উঠে এসেছে মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়তার ছবিও, সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির ম্যানেজার আর - তার মোসাহেবদের দুর্নীতির কথাও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ৩
"বাব্বা! লুঙ্গি, টিকি, পৈতে, টুপি সব একাকার হয়ে গেছে।"-এই উক্তিটি কার এবং এই উক্তিটির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তর:-
■ উৎস ও বক্তা:
উদ্ধৃত উক্তিটি বিজন ভট্টাচার্যের 'আগুন' নাটকের রেশন দোকানির।
■ উক্তিটির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ:
দোকানির যে বর্ণনা নাটকে আছে তা থেকে জানা যায়, সে মোটা নাদুস- নুদুস; তেল কুচকুচে তার গায়ের রং। গঙ্গাজল ছিটানো, ধুনুচি জ্বালা, গণেশকে প্রণাম জানানো থেকে বোঝা যায়, সে খুব ধর্মপ্রাণ।
নাটকে বিশেষ ভূমিকা থাকলেও পুরো নাটকে রেশন দোকানির সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে মাত্র তিনবার। প্রথমটি হল দোকান ও দোকানির বর্ণনা, সেটা নাট্যকারেরই। বাকি রইল দোকানির দুটি মাত্র সংলাপ। প্রথমে মুসলমান ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর:-ে সে বলে যে, সে চাল পেয়েছে সেটাই ঢের, পাবে কি না তা না ভেবে সে যেন ভালোয় ভালোয় কেটে পড়ে। তার মন্তব্য, "লুঙ্গি, টিকি, পইতে, টুপি সব একাকার হয়ে গেছে।" এই মেলামেশাতে তার সুখ নেই। এরপর ওড়িয়া লোকটা যখন তাকে সে-বিষয়ে জ্ঞান দেয় তখন সে তাকে কেটে পড়ার পরামর্শ দিয়ে সিভিক গার্ডের উদ্দেশ্যে নিজের মনোবেদনা জানায়- "হাতি যখন নোদে পড়ে, চামচিকে তায় লাথি মারে।" এই প্রচলিত প্রবাদটি উল্লেখ করে সে তার উচ্চ অবস্থানকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। স্বল্পবাক চরিত্রটিকে এখানে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য ও জীবন্ত করে এঁকেছেন নাট্যকার।
প্রশ্ন ৪
বিজন ভট্টাচার্যের 'আগুন' নাটকের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। [সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন] ৫
উত্তর:-
■ নামকরণের পদ্ধতি সমূহ:
সাহিত্যের নামকরণ নানা প্রকার হতে পারে- চরিত্রকেন্দ্রিক, ঘটনাপ্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী বা বিশেষ তাৎপর্যবাহী। বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটকের ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ করা হয়েছে।
■ 'আগুন' নাটকের মূল প্রতিপাদ্য:
বিজন ভট্টাচার্যের 'আগুন' নাটকের বিষয়বস্তু তথা মূল উপজীব্য হল খাদ্যসংকট।
প্রথম দৃশ্যের কৃষকের পরিবার কাকভোরে জেগে উঠে তাদের কিশোর পুত্রকে চাল সংগ্রহের জন্যে পাঠিয়ে দেয় রেশন দোকানের লাইনে। দ্বিতীয় দৃশ্যেও আর-এক কৃষক তার স্ত্রীকে আগেভাগে রেশন দোকানের লাইনে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে। তৃতীয় দৃশ্যে এক শ্রমিক পরিবারের কর্তাকে আগের দিনে চাল না পাওয়ায় বিস্তর ঝগড়াঝাঁটি করতে এবং বউকে মারধর করার পর সেই বউকেই চাল সংগ্রহের লাইনের দিকে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দিতে দেখা যায়। চতুর্থ দৃশ্যেও একই বিষয়। নানা ধর্ম, নানা সম্প্রদায়ের মানুষ লাইন দিয়েছে।
সেই গোলমালের মুহূর্তে এক যুবক 'আগুন', 'আগুন' বলে চিৎকার করে ওঠে। উৎসুক মানুষদের কৌতূহল মেটাতে সে বলে, "আগুন লেগেছে আমাদের পেটে।" অর্থাৎ খিদের আগুন, খাদ্যাভাবের আগুন জ্বলে পেটে।
■ সার্থকতা বিচার:
'আগুন' শব্দটি এই নাটকে প্রতীকী ব্যঞ্জনা লাভ করেছে। 'আগুন' হয়ে উঠেছে নাটকের কেন্দ্রবিন্দু, মূল প্রতিপাদ্য। তাই সার্বিক বিচারে এই নাটকের 'আগুন' নামকরণটিকে সার্থক ও সুপ্রযুক্ত হয়েছে বলেই মনে হয়।
প্রশ্ন ৫
"কিন্তু এদিকে যে ভারি মুশকিলেই পড়লাম।”- কে, কাকে এ কথা বলেছে? মুশকিলটা কীসের? ২+৩=৫
উত্তর:-
■ উৎস, বক্তা-শ্রোতা:
উদ্ধৃত সংলাপটি বিজন ভট্টাচার্যের প্রথম নাটক 'আগুন'-এর তৃতীয় দৃশ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। নাটকের অন্যতম একটি চরিত্র কারখানার শ্রমিক সতীশ তার সহকর্মী জুড়োনকে এ কথা বলেছে।
■ উদ্ভূত মুশকিল পরিস্থিতি:
এখানে যে মুশকিলের কথা বলা হয়েছে তা সত্যি সত্যিই খুব গুরুতর। প্রবল খাদ্যসংকট চলছে। চারদিকে চালের জন্যে হাহাকার। প্রতিদিন রেশন দোকান থেকে খুবই সামান্য পরিমাণে চাল দেওয়া হচ্ছে। সে চালে একদিনের বেশি চলছে না। তাই আবার পরের দিন ঠিক লাইনে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু মুশকিলের ওপরও মুশকিল আছে। দেরি করে গিয়ে লাইনের শেষের দিকে দাঁড়ালে আবার ভাগ্যে চাল নাও জুটতে পারে। আগের দিনই সতীশের মেয়ে ফুলকি আর তার বউ ক্ষিরির ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটেছিল। শেষে কাছে 'প' দেড়েক চাল ধার নিয়ে কোনোরকমে পেটের খিদে সামলাতে হয়। জুড়োনের অবশ্য সেই সমস্যা নেই।
যেহেতু সে একলা মানুষ, তাই দু-চার পয়সা বেশি দিয়ে হোটেলে খেয়ে নিতেও কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু পরিবার সমেত সতীশের সে উপায় নেই। অত টাকা সে পাবে কোথায়? তাই ভোর ভোর রেশন দোকানের সামনে চাল সংগ্রহের জন্যে লাইনে দাঁড়িয়ে - পড়া ছাড়া আর কোনো গতি নেই তার। সমস্যা হল সতীশকে রোজগারের জন্যে কারখানায় যেতেই হবে। এদিকে বউ আর মেয়ে অকাতরে ঘুমোচ্ছে যা বড়োই মুশকিলের ব্যাপার।
প্রশ্ন ৬
"মুখ সামলে কথা বলিস ক্ষিরি, এই বলে দিলাম। নইলে..."- ক্ষিরি কে, তাকে কে, কেন মুখ সামলে কথা বলতে বলে। তারপরে বস্তা কী করে? ৩+২=৫
উত্তর:-
■ ক্ষিরির পরিচয়: উদ্ধৃত উক্তিটি বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে। ক্ষিরি হল নাটকের অন্যতম চরিত্র কারখানার শ্রমিক সতীশের বউ অর্থাৎ ফুলকির মা।
■ মুখ সামলে কথা বলতে বলার কারণ:
ক্ষিরিকে তার বর সতীশ মুখ সামলে কথা বলতে বলেছে। প্রবল খাদ্যসংকট চলছে। কোম্পানি প্রতিদিন সামান্য করে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রেশন থেকে। সেই কারণে ভোর থেকেই সবাই রেশন দোকানের সামনে চাল সংগ্রহের লাইনে শামিল হচ্ছে প্রতিদিন। দেরি করলেই সমস্যা। আগের দিন দেরি করার জন্যে ক্ষিরি- ফুলকিরা লাইনে দাঁড়িয়েও চাল পায়নি। ধার করে চাল ফুটিয়ে খেয়ে খিদে মেটাতে হয়েছে।
পরের দিন সকালে সেই নিয়ে ক্ষিরির সঙ্গে সতীশের ঝগড়া বাধে। পুরুষ মানুষ হয়ে বউয়ের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারে না অথচ লম্বাচওড়া কথা বলে-এ কথা বলে ক্ষিরি তার বরকে প্রতি-আক্রমণ করলে সতীশ তাকে মুখ সামলাতে বলে। সে আরও বলে তা না হলে সে ক্ষিরিকে মারধোর করবে।
■ কথা অমান্য করার প্রতিক্রিয়া:
তার পরেই বক্তা সতীশ সত্যি সত্যিই ক্ষিরিকে লাথি মারে। নিজের অক্ষমতা ঢাকতেই পরিস্থিতির শিকার অসহায় সতীশ এই অপকর্মটি করে ফেলে। প্রশ্ন ১২ "চা নেই, চিনি নেই, চাল নেই, খালি আছে চুলোটা।"
প্রশ্ন ৭
"এই আর কডা দিন বউ, বুঝলি।"- কে, কাকে এ কথা বলেছে? 'কডা দিন' বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে এবং 'কডা দিন'-এর পরেই-বা কী হবে?
■ উত্তর:- উৎস, বক্তা-শ্রোতা:
উদ্ধৃত সংলাপটি প্রখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। এ কথাটি ভোরবেলা একজন কৃষাণ তার বউয়ের উদ্দেশে বলেছে।
■ 'কডা দিন' বলতে কী বোঝানো হয়েছে:
প্রবল খাদ্যসংকট চলছে। মাত্র দু-সের চালের জন্যে গরিব, মধ্যবিত্ত সব বাড়িরই লোকেরা রেশন দোকানের লম্বা লাইনে শামিল হয়েছে। নাটকের অন্যতম প্রধান একটি চরিত্র কৃষাণ মনে করে এই সংকট সাময়িক, কয়েকটা দিনের জন্যে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। 'কডা দিন' বলতে সংকটের দিন-কটাকে বোঝানো হয়েছে। 'কডা' শব্দটির মাধ্যমে কঠিন দিনগুলিকে কিছুটা অবজ্ঞাও করেছে সে।
■ 'কডা দিনে'র পরে কী হবে:
কৃষাণটি মনে করে, এই' খাদ্যসংকটের দিন খুব বেশি দীর্ঘ হবে না, কিছু সময়ের পরেই এই দুঃসময় কেটে যাবে। তার পরে কষ্ট করে মাঠে-থাকা চৈত্রের ফসল মাচায় তুলতে পারলেই বেশ কিছু দিনের জন্যে নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। কথায় বলে, "আশায় বাঁচে চাষা।" এখানে আগামী দিনে ফসল ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর হয়ে বর্তমানের যন্ত্রণাকে ভোলা এবং ভোলানোর চেষ্টা করেছে কৃষাণ চরিত্রটি। সংকটের মধ্যে থেকেও এই আশাবাদই এই নাটক তথা ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মূল সুর, প্রধান প্রতিপাদ্য।
প্রশ্ন ৮
এই উক্তিটি কার এবং কোন পরিস্থিতিতে, কেন তিনি এই মন্তব্য করেছেন? ৫
উত্তর:-
■ উৎস: উদ্ধৃত সংলাপটি বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
■ উক্তির বক্তা:
নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে এই উক্তিটি করেছেন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা, অফিসের কেরানি হরেকৃষ্ণবাবু।
■ উদ্ভূত পরিস্থিতি ও মন্তব্যের কারণ:
দেশজুড়ে প্রবল খাদ্যসংকট চলছে। হাতে টাকা থাকলেও ইচ্ছামতো চাল কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা না-থাকলে তো কথাই নেই। ইংরেজ তথা সরকার রেশনের মাধ্যমে খুব সামান্য পরিমাণের চাল প্রত্যেক দিন একটু একটু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু গণ্ডগোলটা সেখানেই। এক দিন লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে না-পারলে আর ভাত জুটবে না সেদিনের মতো। এক্ষেত্রে গরিব বা মধ্যবিত্ত সকলের ভাগ্যেরই লেখা এক।
ভোর ভোর খাদ্যসংগ্রহের লাইনে না দড়ালেও একই দশা। এই সব দেখেশুনে মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা, কেরানিবাবু হরেকৃষ্ণ অধৈর্য ও অসহিয়ু হয়ে ওঠেন। বিরক্তির সঙ্গে তিনি বলে ওঠেন "চা নেই, চিনি নেই, চাল নেই, খালি আছে চুলোটা।" অর্থাৎ উনানটা। তাও আবার কয়লার অভাব।
তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে শুধু সাধারণ গরিব মানুষদেরই নয়, অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর লোকেদেরও অসহায়তা প্রকাশ পেয়েছে। সহ্য করতে করতে তো এভাবেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে।
প্রশ্ন ৯
"নিতাই, নিতু! ও বাবা নেত্য। নে, উঠে পড় বাবা এইবেলা।” -কে, কাকে এ কথা বলেছে? নেত্যকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে তোলার কারণ কী? ২+৩=৫
উত্তর:-
■ বক্তা-শ্রোতা:
উদ্ধৃত অংশটি বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য সংলাপটি নেত্যর বাবার। নেত্যর বাবা নেত্যর উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছে।
■ নেত্যকে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি তোলার কারণ:
সময়টা খাদ্যসংকটের। চারদিকে চালের আকাল, সরকারি রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাই প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ করে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় চাল সংগ্রহের জন্য প্রতিদিনই প্রতিটি বাড়ির একজন এক ব্যক্তিকে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। নেত্যদের বাড়িও তার ব্যতিক্রম নয়। লাইনের শেষ দিকে থাকলে চাল নাও মিলতে পারে, এই ভয়ে সবাই ভোর থেকে আগেভাগে চাল সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। নেত্যর বাবারও বিলক্ষণ সেই ভয় আছে। সেই ভয় থেকে সে নেত্য আর নেত্যর মাকে কাক ভোরেই ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে, যাতে করে সবার আগে গিয়ে নেত্য চালের লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে পারে, আর যাতে আজকের দিনের বরাদ্দ চাল পাওয়াটা নিশ্চিত করা যায়।
■ তাৎপর্য:
এখানে নেত্যর স্বাভাবিক ঘুমকাতুরে স্বভাবের বিপরীতে তার বাবার চা না পেয়ে খাবার না জোটার ভয় যুগপৎ কাজ করেছে। ফুটে উঠেছে সাধারণ মানুষদের অসহায়তার সুনিপুণ ছবি।
প্রশ্ন ১০
'আগুন' নাটকটি কোন্ শ্রেণির উল্লেখ করে নাটকটির গঠনতন্ত্রের অভিনবত্ব কোথায় আলোচনা করো। ৫
উত্তর:-
■ উৎস:
প্রখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটকটি একটি একাঙ্ক শ্রেণির নাটক।
■ গঠনতন্ত্রের অভিনবত্ব:
গঠনতন্ত্রের দিক থেকে বিজন ভট্টাচার্যের 'আগুন' নাটকটি অত্যন্ত অভিনব এবং মৌলিক। এই একাঙ্ক নাটকটিতে পাঁচটি দৃশ্য রয়েছে। চারটি দৃশ্য ভোর ও সকালবেলার, একটি দৃশ্য দিনের বেলাকার। এই নাটকের প্রথম চারটি খণ্ডদৃশ্য পরস্পরের থেকে আলাদা ভিন্ন ভিন্ন। তা হলেও যোগসূত্র কিন্তু একটা আছেই। সেটা হল প্রতিটি দৃশ্যের একজন করে করে মানুষকে প্রতিনিধি হিসেবে নাট্যকার রেশন দোকানের লাইনের দিকে এগিয়ে দিয়েছেন। আর পঞ্চম দৃশ্যটি তো রেশন দোকানের সামনে চাল সংগ্রহের লাইনকে ঘিরেই। এটি হল অনেকগুলি বিচ্ছিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতির এক 'প্যানোরেমিক ফর্ম'। এখানে পাঁচটি খণ্ডদৃশ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্রের ভিতরকার চিত্রকে পর্যবেক্ষণ করেছেন নাট্যকার।
প্রথম চারটি দৃশ্যেরই অবস্থা ভিন্ন হলেও সমস্যা একই। সেই কারণে অভিমুখও এক। চালের অভাব, তাই চাল সংগ্রহের লাইনে শামিল হওয়া। পঞ্চম দৃশ্যে এসে পরস্পরের ইনটার্যাকশন-সংযোগ ও সংঘাত। কথা, কথান্তর, মারপিট। তার মধ্যেই এক যুবকের 'আগুন' অর্থাৎ 'পেটে আগুন' - লাগার ঘোষণা নাটকের মূল প্রতিপাদ্য। কিন্তু প্রগতিশীল সমাজভাবনার নাটক বলে এই নাটকের পরিসমাপ্তি হয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরস্পর সহযোগিতা ও মিলেমিশে থাকার আহ্বান দিয়ে।
ছোটো পরিসরে নাটকটি তাই গঠনতন্ত্রের বিচারে যথেষ্ট অভিনবত্বের দাবি রাখে।
প্রশ্ন ১১
"কেষ্টর মা-র সঙ্গে আগেভাগে গে নাইনির একেবারে সে পেরথমে দাঁড়াবি।"-কাকে, কোন্ লাইনে, কেন দাঁড়াতে বলেছে? ৫
উত্তর:-
■ উৎস, বক্তা-শ্রোতা:
উদ্ধৃত সংলাপটি গণনাট্য যুগের প্রধান নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের লেখা 'আগুন' নাটক থেকে চয়ন করা হয়েছে।
■ রেশনের লাইন:
এখানে কৃষাণ তার বউকে খাদ্য- সংগ্রহের লাইনে দাঁড়াতে বলেছে।
■ এ কথা বলার কারণ:
দেশজুড়ে প্রবল খাদ্যসংকট চলছে। রেশনিং-এর মাধ্যমে একটা দিন চালানোর মতো সামান্য করে চাল দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। আর সেই চাল সংগ্রহের জন্যে প্রতিদিন ভোরবেলায় উঠে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছে। তার জন্যে লোকের কাজকর্ম, ঘুম সব চৌপাট। অজগরের মতো লম্বা লাইনই জীবনের সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে এখানে।
প্রতিদিন সামান্য করে চাল দেওয়া হচ্ছে রেশন দোকান থেকে। একদিন সেই চাল পেলে তাতে আর দ্বিতীয় দিন চলে না। তাই পরের দিনও যথারীতি লাইনে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু লাইনে দাঁড়ালেই যে চাল পাওয়া যাবে এমনটাও নয়। লাইনের শেষের দিকে দাঁড়ালে ভাগ্যে চাল জোটেনি এমন ঘটনাও ঘটছে অহরহ। তাই সকলেই চেষ্টা করে কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে রেশন দোকানের সামনে লাইন দিতে। এ ব্যাপারে কেষ্টর মা খুব ওস্তাদ। সে প্রতিদিন খুব ভোরবেলা উঠে চালের লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে আর নিশ্চিন্তে চাল সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরে, ফুটিয়ে ভাত খায়। কৃষাণ তাই তার বউকে পরামর্শ দেয়, কেষ্টর মার সঙ্গেই ভোরবেলা চালের লাইনে যেতে।
প্রশ্ন ১২
"অস্পষ্ট আলোয় কিছুই ভালো করে ঠাহর করা যাচ্ছে না।” -কোন্ নাটকের, কোন্ দৃশ্য এটি? অস্পষ্ট আলোয় মঞ্চের ঘটনাবলি দর্শকের সামনে কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে? ২+৩=৫
উত্তর:-
■ প্রাসঙ্গিক দৃশ্য:
উদ্ধৃত সংলাপটি বিজন ভট্টাচার্যের 'আগুন' নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি নাটকের প্রথম দৃশ্যের অংশ।
■ উপস্থাপিত ঘটনাবলির ক্রম:
বিজন ভট্টাচার্যের প্রথম নাটক 'আগুন'-এর প্রথম দৃশ্যের এই সংলাপটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, পরিস্থিতিটি অদ্ভুত। সময়-প্রত্যুষ কাল। আকাশ আলোকিত হয়নি, তাই অস্পষ্ট আলোয় কিছুই ভালো করে ঠাহর হচ্ছে না। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে না। তবুও স্বল্প আলোয় গরিব ঘরের সাংসারিক টুকিটাকি জিনিপত্তরগুলো আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে।
রীতিমতো অপরিচ্ছন্ন, নোংরা পরিবেশের মাঝখানে দেখা যায় একটা মেটে জালা। তারই গা ঘেঁসে একটা বাঁশের আলনার ওপর দেখা যায় ঝুলন্ত দু-একখানা নোংরা কাপড়, একটা ছেঁড়া চট, আর একখানা পুরোনো ছেঁড়া কাঁথা। খুব অস্পষ্ট নীল আলোয় দেখা যাচ্ছে মেঝের ওপর জনা তিনেক লোক কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।
এই সব দৃশ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোরের সময়-জ্ঞাপক কিছু শব্দও। যেমন একটি মোরগের ডেকে ওঠা, দূর গাঁয়ের থেকে ভেসে আসা আজানের শব্দ, আড়মোড়া ভেঙে কারও হাই তোলার শব্দ ইত্যাদি। এই সমস্ত কিছু মিলে একটি অব্যর্থ ভোরের দৃশ্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন নাট্যকার।