একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় সেমিস্টার, ষষ্ঠ অধ্যায় নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব প্রশ্ন উত্তর | Class 11, 1st semester Political Science, Sixth Chapter । WBCHSE । Nirbachon ebong Protinidhitbo
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। আশাকরি তোমরা একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের এই নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব অধ্যায়টি থেকে যেসব প্রশ্ন দেওয়া আছে তা কমন পেয়ে যাবে। আমরা এখানে একাদশ শ্রেণীর, দ্বিতীয় সেমিস্টারের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব এর SAQ, শূন্যস্থান পূরণ, এক কথায় উত্তর দাও, Descriptive, ব্যাখ্যা মুলক প্রশ্নোত্তর , সংক্ষিপ্ত নোট এগুলি দিয়েছি। এর পরেও তোমাদের এই নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব অধ্যায়টি থেকে কোন অসুবিধা থাকলে, তোমরা আমাদের টেলিগ্রাম, হোয়াটসাপ , ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারো ।
UNIT 6 - নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্ব অধ্যায়ের সকল প্রশ্ন ও উত্তর
১. নির্বাচনি অনিয়ম প্রতিরোধে জাতীয় নির্বাচন কমিশন কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
উত্তরঃ-
* ভূমিকা:
নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনের প্রধান কাজ হল নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা।
* ব্যাখ্যা:
নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধে জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে পারে, যেমন-
* নির্বাচনি আচরণবিধি প্রণয়ন:
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি আচরণ বিধি প্রণয়ন করে, যা নির্বাচনের সময় সকল প্রার্থী, দল এবং - ভোটারদের জন্য বাধ্যতামূলক। এই আচরণবিধির মাধ্যমে প্রার্থীরা - নির্বাচনি প্রচারে অনিয়ম করতে পারে না এবং ভোটারদের প্রভাবিত করার কোনো চেষ্টা করতে পারে না।
* নির্বাচনি পর্যবেক্ষক নিয়োগ:
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে, যারা বিভিন্ন নির্বাচনি কেন্দ্রে তদারকি করে। এই পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং কোনো অনিয়ম দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে জানায়। • বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার: অনিয়ম প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন-ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (EVM) এবং ভিভিপ্যাট (VVPAT) ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তিগুলি ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতা নিশ্চিত করে, যা অনিয়মের সম্ভাবনা কমায়।
* উপসংহার:
নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধে জাতীয় নির্বাচন । কমিশন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে। এই ব্যবস্থাগুলি জনগণের আস্থা অর্জনে সহায়ক এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য।
২. ভারতে লোকসভা নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
ভূমিকা:
ভারতের লোকসভা নির্বাচন দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দেশের জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে। লোকসভা হল ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ, যেখানে সাংসদরা (Member of Parliament) নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে সরকার গঠন করেন।
* ব্যাখ্যা:
ভারতে লোকসভা নির্বাচন 'ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট' (FPTP) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের মোট লোকসভা আসন সংখ্যা ৫৪৩টি, যা বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বিভক্ত। প্রতিটি আসন থেকে একজন সাংসদ নির্বাচিত হন। ভোটাররা তাদের নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকার প্রার্থীদের মধ্যে একজনকে ভোট দেন। যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনি সেই এলাকার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন।
এই পদ্ধতিতে দলীয় প্রার্থীরা এবং কিছু ক্ষেত্রে নির্দল প্রার্থীরাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাধারণত, নির্বাচনে যে দল বা জোট ২৭২টি বা তার বেশি আসন পায়, তারা সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। নির্বাচনের সময় ভোটারদের তালিকা প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন এই পুরো প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করে।
* উপসংহার:
ভারতের লোকসভা নির্বাচন একটি বৃহৎ ও জটিল প্রক্রিয়া, যা দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে সুসংহত করে। FPTP পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় এবং সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদমর্যাদা ও কার্যাবলি সম্বন্দ্বে আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
* ভূমিকা:
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) একজন গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা বহনকারী কর্মকর্তা, যিনি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কাজ হল নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
* ব্যাখ্যা:
মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদমর্যাদা এবং কার্যাবলি নিম্নরূপ-
* পদমর্যাদা:
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার একজন সাংবিধানিক কর্মকর্তা, যার পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সমান। তিনি একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে কাজ করেন এবং তাঁর নিয়োগ, মেয়াদ এবং অপসারণ প্রক্রিয়া সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত হয়। সাধারণত, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ ৬ বছর বা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত, যেটি আগে আসে।
* কার্যাবলি:
মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের প্রধান কাজ হল নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি পরিচালনা করা। তিনি নির্বাচনি আচরণবিধি প্রণয়ন, নির্বাচনি তদারকি এবং নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ তত্ত্বাবধান করেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিশন একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করে।
* নির্বাচনি সমস্যা সমাধান:
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনি সমস্যা এবং বিতর্ক সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রার্থীদের যোগ্যতা, নির্বাচন আচরণবিধির লঙ্ঘন এবং নির্বাচনি ফলাফলের বিতর্ক সমাধানে নির্দেশনা দেন এবং প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
* উপসংহার:
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার একজন গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা বহনকারী কর্মকর্তা, যার কাজ নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। তার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
৪. 'ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট' (FPTP) ভোটদান পদ্ধতিটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ-
ভূমিকা:
'ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট' (FPTP) পদ্ধতি হল এমন একটি ভোটদান পদ্ধতি যেখানে সবচেয়ে বেশি ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এটি একটি প্রাচীন ভোটদান পদ্ধতি, যা বিশ্বজুড়ে বহুদেশে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই পদ্ধতির সরলতা এবং দ্রুত ফলাফল প্রদানের ক্ষমতার জন্য এটি এখনও জনপ্রিয় রয়েছে।
* ব্যাখ্যা:
FPTP পদ্ধতিতে, প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা একজন প্রার্থীকে ভোট দেন। সাধারণত, প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পান, তিনি বিজয়ী হন এবং তিনি সেই এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। এটি একটি সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পদ্ধতি, যেখানে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি ভোট দিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে কোনো ভোটার একটি মাত্র ভোট দিতে পারেন এবং তাকে একটি প্রার্থী বেছে নিতে হয়। বিজয়ী প্রার্থী প্রায়শই মোট ভোটের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পায়, কিন্তু সেটি ৫০% না হলেও তিনি নির্বাচিত হন।
FPTP পদ্ধতির একটি বড়ো সুবিধা হল এর সরলতা এবং দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করার ক্ষমতা। এই পদ্ধতিতে নির্বাচনি প্রক্রিয়া কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায় এবং গণনা প্রক্রিয়াও সহজ হয়। তবে, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটি প্রধান সমস্যা হল 'ভোটের অপচয়' বা 'wasted votes'। এই সমস্যা তখন সৃষ্টি হয় যখন একটি বড়ো সংখ্যক ভোটার এমন প্রার্থীকে ভোট দেয় যিনি বিজয়ী হন না, যার ফলে সেই ভোটগুলি কার্যত । কোনো মূল্য পায় না।
* উপসংহার:
FPTP পদ্ধতি সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তার সরলতা এবং কার্যকারিতার জন্য। এটি একটি দ্রুত ও সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পদ্ধতি, যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনমতকে প্রতিফলিত করতে সক্ষম। তবে, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন-ভোটের অপচয় এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা ছোটো দলের প্রতিনিধিত্বের সমস্যা। এই সীমাবদ্ধতাগুলি মোকাবিলার জন্য কিছু দেশে এই পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি এবং অন্যান্য ভোটদান পদ্ধতি বিবেচিত হয়েছে।
৫. ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ-
ভূমিকা:
নির্বাচন কমিশন ভারতের একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য দায়ী। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
* ব্যাখ্যা:
নির্বাচন কমিশনের প্রধান ভূমিকা হল দেশের বিভিন্ন নির্বাচনি স্তরে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনা করা। কমিশন ভোটার তালিকা প্রস্তুত, প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই এবং নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে। এ ছাড়া, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি আইন ও বিধি প্রয়োগের জন্য দায়ী এবং নির্বাচন চলাকালীন সময়ে সমস্ত ধরনের নির্বাচনি অপরাধ প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
নির্বাচন কমিশন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা হল নির্বাচন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। 'Systematic Voters' Education and Electoral Participation' (SVEEP) প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভোটারদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালানো হয়, যা ভোটারদের মধ্যে ভোটদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়।
* উপসংহার:
ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি ভিত্তি, যা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। কমিশনের ভূমিকা দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং জনগণের মধ্যে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আস্থা বাড়ায়।